কৃপাদৃষ্টি কি আর পাবে না সুন্দরবন
তুমি সব ধরনের আশ্বাস দিয়ে
আমাকে নিঃশেষ করে দিয়েছ।
আমি অন্য কোথাও যাব না,
আমি সুন্দরবনেই থাকব।
কৃপার আর্তনাদ! কৃপা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির একটি বিরল গাছ। একে খুব একটা দেখা যায় না।
সুন্দরবন থেকে অবলুপ্ত হওয়ার পথে। এটি একটি গুল্ম জাতীয় গাছ। বেশি লবণযুক্ত মাটিতে বাঁচতে পারে। তাই এদেরকে সমুদ্র কিনারাতে একসময় জন্মাতে দেখা যেত।
কেন কৃপা অন্য কোথাও যাবে না, সুন্দরবনেই থাকবে। কেনই বা আর্তনাদের সুরে সে কৈফিয়ত চাইছে সভ্যতার কাছে। ঘটনাটা একটু শোনা যাক। একসময় কৃপার সংখ্যা সুন্দরবনের গভীরে ভালোরকম ছিল। কালের কুটিল চক্রে কৃপার সংখ্যা ক্রমশঃ কমতে থাকে। ব্যাপক হারে বন সংহারের ফলে এরা নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাছাড়াও অজানা কিছু কারণের জন্য কৃপা ক্রমশঃ অবলুপ্তির পথে। লেখকের অভিজ্ঞতা এইরকম; একসময় বকখালিতে শুধুমাত্র কৃপার গাছ এবং এদের চারাগাছ দেখা যেত। সভ্যতার করাল গ্রাসে সে আজ নিঃশেষ। বকখালি টুরিস্ট প্লেস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যায়। ব্যাপক ভাবে কৃপা গাছ কাটা হয়। কৃপার চিতার উপরে সভ্যতার লেলিহান জয়যাত্রা শুরু হয়। বকখালির মত একটা নিরিবিলি জায়গা সে বেছে নিয়েছিল বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু তারও এই করুণ পরিসমাপ্তি। তাই মানব সভ্যতার কাছে তার মিনতি – আমি অন্য কোথাও যাব না, আমি সুন্দরবনেই থাকব।
ছোট গাছ, অথচ এদের ডালপালা এত বেশি যে, এরা বড় গোলাকার ঝোপ তৈরি করতে পারে। কেউ যদি কৃপা গাছের গোড়ায় বসে থাকে, তাহলে তাকে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়। এদের পাতাগুলো নরম এবং রসালো। কাণ্ড খুব দুর্বল। মূলগুলো ঢেউ খেলানো এবং প্রায় মাটির উপরে দেখা যায়। এরা শ্বাসপ্রশ্বাস চালাতে পারে। ফুল মঞ্জুরি দণ্ডটি ছোট এবং ডালপালার ডগায় হয়ে থাকে। ফুলগুলো সাদা, কিন্তু খুব একটা চোখে পড়ার মত নয়। মৌমাছি ফুলের পরাগযোগ করে।
আশার কথা হল যে সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় কৃপাকে লাগানো হয়েছে। ওই কৃপাগুলো বড় হয়েছে এবং ফুল ও ফল হচ্ছে। সংশয় থাকলেও আমরা আশাবাদী কৃপা অন্য কোথাও যাবে না, কৃপা সুন্দরবনেই থাকবে। (চলবে)