বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমাতে হবে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডেই বাতাস দূষিত হচ্ছে। গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা কমাতে অবিলম্বে কার্বন দূষণ বন্ধ করতে হবে-এই স্লোগানে পৃথিবী এখন সরগরম। তার জন্যই লক্ষ টাকা খরচ করে রাষ্ট্রপ্রধানদের ক্লাইমেট চেঞ্জিং সামিট। আরও কত সামিট হবে কে জানে! কিন্তু কার্বন নির্গমন করা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে বা বন্ধ করতে যা যা করা প্রয়োজন সেটা দূরবীণ দিয়ে দেখতে হয়!
এই পরিস্থিতির মধ্যে একদল বিজ্ঞানী এবং তাদের সঙ্গে থাকা পরিবেশবিদরা সম্পূর্ণ বিপরীত এক মতামতকে পেশ করলেন। তারা বলেছেন, পৃথিবীর সব জায়গায় ‘কার্বন তাড়াও’ স্লোগানটা প্রযোজ্য নয়। এরকম অঞ্চলও পৃথিবীতে রয়েছে যারা কার্বন ডাই অক্সাইড ধরে রেখেছে! সেই অঞ্চলগুলো থেকে যদি কখনও কার্বন ডাই অক্সাইড বেরতে থাকে তাহলে কিন্তু পৃথিবীর সর্বনাশটা আরও দ্রুত হবে! মানে আরও তাড়াতাড়ি পৃথিবীর বাতাস দূষিত হবে এবং তাপমাত্রার পারদ আরও দ্রুত ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যাবে! তাই সেই অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করার প্রয়োজন!
নেচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রথম সারিতে থাকা বিজ্ঞানী মণিকা মুন জানিয়েছেন, পৃথিবীর কিছু অঞ্চলকে তারা চিহ্নিত করেছেন। এই অঞ্চলগুলো সম্মিলিতভাবে এই মুহুর্তে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড ধরে রেখেছে অঙ্কের হিসেবে ১৩৯ গিগাটন। বোঝা যাচ্ছে না তো? ১৫ বছর ধরে মানুষের কাজকর্মে পৃথিবীর হাওয়ায় যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়েছে তার সমপরিমাণ!
বিশেষ অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাজনের জঙ্গল, প্যাসিফিকের উত্তর-পশ্চিমের উপত্যকা, কঙ্গো উপত্যকা আর পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ বোর্নিওর জঙ্গল আর জলাভূমি। মণিকা মুন জানাচ্ছেন, এই অঞ্চলগুলো যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে সেখানে রেড-উড, ওক, পাইন বা বোর্নিওর বিশাল জলাভূমিতে থাকা ম্যানগ্রোভ জঙ্গল তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ বছর লেগে যাবে। ততদিনে এই অঞ্চলগুলোয় সংরক্ষিত বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন হবে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে। তাই জঙ্গল ধ্বংস নয়, বিশাল গাছগুলোকে কেটে ফেলা নয়। মানুষকে এরা দুর্যোগের মধ্যেও অবিরাম বাঁচানোর চেষ্টা করছে! মানুষ বুঝছে কি না কে জানে!