বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
এ এক আজব শপিং মল। সেখানে সশরীরে না গিয়েও হাজির থাকবেন আপনি। Photo Credit: TechStory
শপিং মল (Shoppng Mall), তরুণ প্রজন্ম থেকে মাঝবয়সী সকলেরই পছন্দের হ্যাংআউট প্লেস। এক ছাদের তলায় কেনাকাটা, ভুরিভোজ, গেম পার্লার এমনকি স্যালোঁ থেকে শুরু অন্যান্য অনেক পরিষেবাই পাওয়া যায়। বন্ধুদের সঙ্গে কফির আড্ডা হোক কিংবা ছোটোখাটো বিজনেস মিটিং, শপিং মলের ব্যতিক্রম নেই। আর ধরুন এই শপিং মলে যদি আপনি পৌঁছে যান বাড়িতে বসেই।মানে ক্যাব বুক করতে হবে না, বাসে-অটোতে সফর করার ঝক্কি নেই, বাড়ি থেকে বেরোতেই হবে না… কিন্তু তাও নিমেষে আপনি পৌঁছে যাবেন শপিং মলে— শুনে ভাবছেন তো এমনটা আবার হয় নাকি? এ তো দিবাস্বপ্ন! আসলে কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। বরং মেটাভার্সে (Metaverse) হাজির হতে চলেছে এক আজব শপিং মল। ভার্চুয়াল এই শপিং (Virtual Shopping Mall) মলে পছন্দের মানুষদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতে পারবেন আপনি। বাড়ি থেকে না বেরিয়েই পৌঁছে যাবেন শপিং মলের পছন্দের ক্যাফেটেরিয়ায়। সেখানে জমিয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডাও হবে। খুব দ্রুত আসতে চলেছে একটি ভার্চুয়াল মল। মেটাভার্সের রিয়েল এস্টেট সেলার মেটামল (Metamall) এই ভার্চুয়াল মল আনতে চলেছে।
মেটামলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সার্জ জ্ঞানচন্দানি জানিয়েছেন, ফিজিক্যাল মল অর্থাৎ যেমনটা আমরা দেখে থাকি আর ট্র্যাডিশনাল ই-কমার্সের মাঝামাঝি রয়েছে এই ভার্চুয়াল শপিং মল। একটি ই-কমার্স শপিং সাইটে একজন ইউজার যা যা দেখতে পান সেটাই আরও উন্নত উপায়ে বলা ভাল ‘বেটার ভিজ্যুয়াল এক্সপিরিয়েন্স’ নিয়ে আসতে চলেছে। এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ইউজাররা একটি মলে প্রবেশ করে লোকজনে সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো এখনকার শপিং মলের সঙ্গে পরিচিত। তাহলে এই ভার্চুয়াল মলের সঙ্গে কীভাবে পরিচিত হবে তাঁরা? জ্ঞানচন্দানির কথায় এই ভার্চুয়াল মলের ধারণা অনেক বেশি প্রগতিশীল হবে।
আমেরিকার থেকেই শপিং মলের ধারনার উত্থান হয়েছিল ১৯৫০- এর দশকে। এরপরে রমরমা হয়েছে ই-কমার্সের। অ্যামাজনের হাত ধরেই শুরু হয়েছে এর উত্থান। কিন্তু বর্তমানে যখন রিটেল নিয়ে আলোচনা হয়, তখন এটা স্পষ্ট যে এই ধারণা ক্রমশ পরিবর্তশীল। সাবেকি শপিং মলের ধারণা কখনই শেষ হবে না। কিন্তু মেটাভার্সের ভার্চুয়াল শপিং মলের প্রতিও ক্রমশ আকর্ষণ আবড়ছে তরুণ প্রজন্মের ভোক্তাদের। শুধু তাই নয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড, কর্পোরেট সংস্থা এমনকি যাঁরা এনএফটি (নন ফাঙ্গিবেল টোকেন)- এত বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তাঁরাও মেটাভার্সের রিয়েল এস্টেট মেটামলের ‘ভার্চুয়াল শপিং মল’- এর ব্যাপারে উৎসাহী হয়েছেন।
জ্ঞানচন্দানির মেটামলের উত্থান হয়েছে ২০২১ সালে। এই ভার্চুয়াল রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার ইউজারদের মেটাভারসসে রিয়েল এস্টেট কিনতে সাহায্য করে। মেটামল আসলে মেটাভার্সের এমন একটি শপিং সেন্টার বা মাধ্যম যা তৈরি Solana- র ভিত্তিতে। এই Solana হল একটি ব্লকচেন বেসড ভার্চুয়াল দুনিয়া। এই মেটামলে একজন ইউজার জায়গা কিনতে বা লিজ নিতে পারবেন। আর এর ফলে ওই এলাকা ওই নির্দিষ্ট ইউজারের হয়ে যাবে। এমনটাই জানিয়েছেন, মেটামলের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান সাহান রায়।
প্রাথমিক ভাবে যখন মেটামল ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে লাইভ হয়েছিল তখন এর সঙ্গে যুক্ত ছিল ২০টি ব্র্যান্ড। বড় ব্র্যান্ডের দোকানের পাশাপাশি ছিল নামি কসমেটিকসের ব্র্যান্ডও। আগামী ছয় মাসে এই ব্র্যান্ডের সংখ্যা ২০০০ থেকে ২৫০ করার পরিকল্পনা রয়েছে মেটামলের। সাহান জানিয়েছেন, এই মেটামলকে একটি মাল্টি-পারপাস শপিং মল হিসেবে দেখছেন তিনি, যেখানে অফিসের জায়গাও থাকবে আবার গেমিং জোনও থাকবে। আসলে এটা অনেকটা এমন এক শহর যেখানে নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারী হিসেবে থাকতে পারবেন ইউজাররা। তাঁদের কাছে রিয়েল এস্টেটের মালিকানা থাকবে এবং উপার্জনও করা যাবে সেখান থেকে। ৯০০ বর্গফুট জায়গা কেনার জন্য ২২৫ ডলার প্রয়োজন। বড় জায়গা কিনতে গেলে ২৭০০ ডলার খরচ হতে পারে।
২০ হাজার প্লট রয়েছে এই মেটামলে। একজন ইউজার এর মধ্যে থেকে দুটো প্লট কিনলে তা শাসনের অধিকার পাবেন ওই ইউজার। প্রতিটি জায়গা বা স্পেসই এক একটা এনএফটি। রয়েছে নির্দিষ্ট নম্বরও। এই সমস্ত প্লট বিক্রি করারও সুযোগ থাকবে মার্কেটপ্লেসের। চাহিদা অনুযায়ী দাম দিয়ে ওই জায়গা কেনা যাবে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড জায়গা কিনে নিজেদের মতো ডিজাইন করে এলাকা বা দোকান তৈরি করতে পারবেন। সেখানে থ্রিডি এক্সপিরিয়েন্সে শপিং করা সম্ভব হবে। কিন্তু তাহলে কী এতদিন যেভাবে রিটেল ব্যবসা চলেছে তা শেষ হতে চলেছে। জ্ঞানচন্দানি বলছেন তা সম্ভব নয়। তবে ই-কমার্স যেমন সমান্তরাল ভাবে কাজ করে এক্ষেত্রেও তেমনই হবে। কারণ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির দুনিয়া এখনও সেভাবে উন্নত হয়নি। মানুষও এর সঙ্গে সড়গড় হননি। তবে ভবিষ্যতে রিটেল ব্যবসায় যে এই ভার্চুয়াল মিল ব্যাপক প্রভাব ফেলবে তা আন্দাজ করা হচ্ছে।