বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মানবদেহে বসানো হলো ‘মেকানিকাল হার্ট’

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মানবদেহে বসানো হলো ‘মেকানিকাল হার্ট’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ মার্চ, ২০২২

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মানুষের শরীরে ‘মেকানিকাল হার্ট’ প্রতিস্থাপন হলো সফলভাবে। ‘মেকানিকাল হার্ট’ রক্তমাংসের হৃদপিণ্ডের বদলে রক্ত সঞ্চালন করে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার একটি যন্ত্র। এ মাসের ২ তারিখে ৪২ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে মেকানিকাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট করেছেন ঢাকার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল। প্রায় চার ঘন্টায় অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়েছে। যন্ত্রটির দাম সহ সবমিলিয়ে খরচ পড়েছে সোয়া এক কোটি বাংলাদেশী টাকার আশেপাশে।
অস্ত্রপচারকারী দলের সদস্য কার্ডিয়াক সার্জেন ডা. আরিফ আহমেদ মহিউদ্দিন বলেছেন, হৃদযন্ত্রের কাজ হচ্ছে বিরতিহীনভাবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করা। হৃদযন্ত্রের ক্ষতি যে পর্যায়ে গেলে এই কাজটি করতে পারে না সে কাজটিই করে দেয় এই যন্ত্র। সহজ কথায় এটি একটি রক্ত পাম্প করার যন্ত্র। এর ফলে হৃদযন্ত্র বিশ্রাম পায় এবং শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে আসে।
এটি ব্যাটারি চালিত যন্ত্র, যা রীতিমতো চার্জ দিতে হয়। যে যন্ত্রটি বাংলাদেশে বসানো হয়েছে সেটি ‘হার্টমেট-থ্রি’। এর ব্যাটারি চার্জ থাকে ছয় থেকে সাত ঘন্টার মতো। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাম্প করার অংশটি বসানো হয় হার্টের নিচে বাঁদিকের অংশে। হৃদপিন্ডের সাথে যন্ত্রটি টিউব দিয়ে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। এক ধরণের চুম্বক শক্তি দিয়ে যন্ত্রটি পাম্প করে। অন্যদিকে পেট ফুটো করে তার মাধ্যমে শরীরের বাইরের দিকে তার দিয়ে ব্যাটারি ও মনিটরের সাথে সংযোগ করে দেওয়া থাকে। এই বাইরের অংশটি স্ট্র‍্যাপ দিয়ে ব্যাগে ভরে দেওয়া থাকে যা সবসময় বহন করতে হয়। বহনযোগ্য ওজন মোটামুটি দেড় কেজি মতো। আর মনিটরের সাহায্যে ব্যাটারির চার্জ ও যন্ত্রের কার্যক্রম জানা যায়। তবে এটি কিন্তু হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের মতো দীর্গস্থায়ী সমাধান নয়। হৃদযন্ত্র দ্রুত অবনমনের দিকে গেলে সুস্থ হৃদযন্ত্র পেতে দেরী হলে এই যন্ত্রটি লাগানো হয়।
ডা. আরিফ আহমেদ মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, এই মডেলটি বাজারে এসেছে ২০১৭ সালে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গেছে এই যন্ত্র প্রায় ৫ বছর রোগীকে সুস্থ ভাবে বাঁচিয়ে রাখে। যন্ত্রটির স্থায়িত্ব মোটামুটি আট- দশ বছর। যন্ত্র বসানোর পর রোগী স্বাভাবিক কাজ যেমন, বাজার করা, অফিস করা ইত্যাদি করতে পারেন। ইওরোপে এই যন্ত্র লাগিয়ে খেলাধুলা, বাইসাইকেল চালানো এমনকি বডি বিল্ডিংয়ের নজির আছে। অর্থাৎ এই যন্ত্র রোগীকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে।