চীনে উদ্ধার ডাইনোসরের ভ্রুণের জীবাশ্ম

চীনে উদ্ধার ডাইনোসরের ভ্রুণের জীবাশ্ম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ এপ্রিল, ২০২২

বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানেই রয়েছে চমক। অত্যাশ্চর্য্য সব জিনিস সাধারণ মানুষের সামনে পেশ করেন বিজ্ঞানীরা। এবার তেমনই এক জিনিসের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা এর আগে কেউ কখনও দেখেনি। একটি ডায়নোসরের ডিমের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। আর তার ভিতরে গুটিসুটি মেরে রয়েছে ডায়নোসরের ভ্রূণ। দেখে মনে হবে যেন শিশু ডায়নোসর সুরক্ষিত রয়েছে ওই ফসিল বা জীবাশ্ম ডিমের ভিতর। কিন্তু আদতে ওটি ডায়নোসরের ভ্রূণ। এর আগে এমন কোনও আবিষ্কার বিজ্ঞানীরা করেননি।

নতুন একটি গবেষণা অনুসারে, এই জীবাশ্ম থেরোপড ডায়নোসর এবং তারা যে পাখিদের বিবর্তিত হয়েছে, এই দুইয়ের মধ্যে এক উল্লেখ্যযোগ্য মিল দেখিয়েছে। প্রায় ৭০ মিলিয়ন বছরের পুরনো এই জীবাশ্ম ভ্রূণ। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘Baby Yingliang’। চিনের একটি যাদুঘরের নাম অনুসারে এই নামকরণ করা হয়েছে। আর সেখানেই রাখা হয়েছে এই fossilised embryo বা জীবাশ্ম ভ্রূণটিকে। ডায়নোসরের যে ডিমটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে তার খোলসের ভিতরের ৬ ইঞ্চি জায়গায় কুঁকুড়ে যাওয়া অবস্থায় ছিল এই জীবাশ্ম ভ্রূণ। এই পর্যায়ে ভ্রূণ দেখতে অনেকটা বর্তমানে পাখিদের মতো লাগে। কিন্তু পাখিদের মতো কিছুটা গড়ন হলেও এই ভ্রূণে ছোট ছোট হাত এবং থাবা দেখা গিয়েছে। বরং ডানা দেখা যায়নি। Paleontologists বা জীবাশ্মবিদদের এই নতুন আবিষ্কার রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে।

জানা গিয়েছেম ডায়নোসরের ডিমের যে জীবাশ্মের হদিশ পাওয়া গিয়েছে সেটি ১৭ সেন্টিমিটার লম্বা। আর তার ভিতরে কুঁকড়ে যাওয়া অবস্থায় ছিল ডায়নোসরের ভ্রূণ। এই ডায়নোসরটি মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত মোট ২৭ সেন্টিমিটার লম্বা। এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা। পূর্ণবয়স্ক হলে এই ডায়নোসর ২ থেকে ৩ মিটার লম্বা হতো বলে আন্দাজ করছেন Paleontologists-রা। বিজ্ঞনীরা বলেছেন, এ ভাবে ডায়নোসরের ভ্রূণের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা।

দক্ষিন চীনের গানঝউ শহরে আনুমানিক ৬০ লক্ষ বছরের পুরোনো ডাইনোসরের ভ্রুণের জীবাশ্ম পাওয়া গেছিল ২০১০ সালে। তারপর সেটি এক যাদুঘরে ছিল এতদিন। যাদুঘর সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় সেখানের গচ্ছিত জীবাশ্ম ঘেঁটে দেখতে গিয়ে নজরে আসে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্মটি। বিজ্ঞানীরা দেখেন ভ্রুণটি নিখুত ভাবে সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। জীবাশ্ম থেকে দেখা যাচ্ছে ভ্রুণটি ডিমের ভেতর গুটিয়ে থাকা অবস্থায় ছিল। পাখিদের ডিম ফুটে বাচ্ছা বের হওয়ার কিছু আগে ভ্রুণ এ অবস্থায় থাকে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় একে বলা হয় ‘টাকিং’।

বিজ্ঞানীরা ভ্রুণ ডাইনোসরটির নাম দিয়েছেন বেবি ইংলিয়াং। এর দৈর্ঘ্য মাথা থেকে লেজ অবদি ১০.৬ ইঞ্চি,এবং যে ডিমের মধ্যে এটি রয়েছে সেই ডিমের দৈর্ঘ্য ৬.৭ইঞ্চি। অনুমান ভ্রুণটি দাঁতহীন থেরোপোড, অথবা ওভিরাপ্টোরোসোর প্রজাতির ডাইনোসরের। ওভিরাপ্টোরোসোরস এর অর্থ ‘ডিম চুরি করা সরিসৃপ’- আনুমানিক ৬০ লক্ষ থেকে ১০ কোটি বছর আগে এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে এদের বসবাস ছিল। গবেষণা দলের মতে ডিমের ভেতর ভ্রুণ থাকা অবস্থায় আকস্মিক ভূমিধ্বসের কারণে ভ্রুণটি ঐ অবস্থায় সুরক্ষিত হয়ে যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন উন্নত প্রযুক্তির স্ক্যানিং ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ কঙ্কালের ছবি তৈরি করবেন।

গবেষণা দলের দদস্য জীবাশ্মবিদ অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসেট বলেন তাঁর দেখা সবচেয়ে চমকপ্রদ একটি ডাইনোসরের জীবাশ্ম এটি। ড. ফিওন ওয়াইসুম মা বলেছেন, ‘ইতিহাসে সবেচেয়ে উৎকৃষ্ট অবস্থায় সুরক্ষিত ডাইনোসর ভ্রুণের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়ার ঘটনা এটি’। ড. মা আরো জানান এই জিবাশ্ম থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে আধুনিক পাখি প্রজাতির পূর্বপুরুষ ছিল ডাইনোসর। ডাইনোসরের বিবর্তনের মধ্যে দিয়েই এসেছে আজকের পাখি প্রজাতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − six =