ভারতে ‘অরণ্য সুরক্ষা’র নেপথ্যের নায়ক

ভারতে ‘অরণ্য সুরক্ষা’র নেপথ্যের নায়ক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ মে, ২০২২

টিএন গোদাবর্মন। ভারতে অরণ্য বাঁচাও এবং রক্ষার জন্য যে মানুষ আদালতের হস্তখেপে রাষ্ট্রকে বাধ্য করেছিলেন আইন প্রণয়ন করে অরণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলেছে তার অপরিসীম লড়াই। আজ তিনি অবশ্য কাব্যে উপেক্ষিত!
গোদাবর্মন ছিলেন মালায়ালি জমির মালিকদের পরিবার কোভিলাকাম বংশের সন্তান। রাজ্য জমি অধিগ্রহণ করার আগে যারা ছিলেন নীলগিরিতে প্রায় ৮০ হাজার একর বনের একচ্ছত্র মালিক। ১৯৩০-এ জন্ম গোদাবর্মণের। ১৯৯৫-এ গুদালুরের জঙ্গল থেকে নির্বিচারে কাঠ কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নীলগিরির আদিবাসী জনজাতি মানুষদের পক্ষে দাঁড়িয়ে সুপ্রিমকোর্টে একটি মামলা দায়ের করলেন গোদাবর্মন। তখনও জানতেন না যে এই মামলা অরণ্যের সুরক্ষা সংকান্ত বিষয়ে সরকারের ভিত নাড়িয়ে দেবে। প্রায় ২৫ বছর ধরে চলেছে ‘টিএন গোদাবর্মন বনাম ভারত এবং অন্যান্যরা’—মামলা। জমা পড়েছে ছয় হাজার আবেদনপত্র এবং দেওয়া হয়েছে ১১৭০টি অর্ডার। বিচারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ৮৮ জন বিচারক। আদালতকে নিজেকেই দেশের জঙ্গল এবং বন্য জীবনের অভিভাবক হিসেবে নিয়োগ করতে হয়েছে। টিএন গোদাবর্মন শুধু বলেছিলেন, “আমি তো মাত্র কিছু গাছকেই বাঁচাতে চেয়েছিলাম!” গাছ বাঁচাতে সরকারকে দেওয়া তার চিঠিতে হুঁশ ফিরেছিল রাজ্য সরকারের। ১৯৯৬ সালে আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকারগুলির কাছে বার্তা যায়, বনভূমিগুলিতে সমস্ত অবৈধ কাজ বন্ধ করতে হবে। বিপদে পড়েছিল মূলত চোরাকারবারীরা। যার প্রতিফলনে গোদাবর্মণ নিয়মিত হুমকি পেয়েছিলেন চোরাকারবারীদের কাছ থেকে। স্যুটকেস ভর্তি টাকা পাঠিয়ে লোভ দেখানোর চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু তাতেও লড়াই থামেনি গোদাবর্মণের। শেষপর্যন্ত, ২০০৬-এর ডিসেম্বরে ‘বন অধিকার আইন’ (এফআরএ) প্রণয়ন করা হয় একটি ‘ঐতিহাসিক অন্যায় সংশোধন’ করার জন্য। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের জায়গায় নতুন এই আইন প্রয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়কে। যদিও এই মন্ত্রণালয় এখন ভীষণভাবে অবহেলিত।
৮৬ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন গোদাবরণ। দেখে গিয়েছেন তার সাধের কেরলের গুদালুরের জঙ্গল এখন সুরক্ষিত!