ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে হিন্দুকুশ হিমালয়ের তুষারচাদর!

ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে হিন্দুকুশ হিমালয়ের তুষারচাদর!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ জুন, ২০২২

সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে হিমালয়ে। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় গড় তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে উচ্চতম পর্বতমালায়। এবার নতুন তথ্য সামনে আনলেন ভারতীয় গবেষকরা। বিগত দু-দশকে হিন্দুকুশ-হিমালয় অঞ্চলে বরফের আস্তরণ কমেছে প্রায় ৫-১৫ শতাংশ।
২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল এই গবেষণা। বিগত পাঁচ বছর ধরে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও তার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি মডেল থেকেই এই সতর্কবার্তা গবেষকদের। গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় এই গবেষণাপত্রটি। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঝাড়খণ্ডের আইএসএম ধানবাদের অধ্যাপকরা। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভূ-তত্ত্ব বিদ্যার অধ্যাপক অনুপকৃষ্ণ প্রসাদ।
তাঁর কথায়, ভারতের উত্তরাঞ্চলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট বাড়ছে মানুষের কার্যকলাপের কারণে। যা সরাসরি উত্তপ্ত করে তুলছে ট্রপোস্ফিয়ারের উপরের অংশকে। আর তার প্রভাবেই ক্রমে গলে যাচ্ছে হিন্দুকুশ-হিমালয়ের তুষারের আচ্ছাদন, হিমবাহ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পশ্চিমাংশের ৬০০০ মিটার থেকে উচ্চতর পর্বতমালাগুলিতে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলি থেকে ২০০০-২০১৭ সালের মধ্যে সংগৃহীত হয়েছিল সিসমিক তথ্য। গবেষকরা জানিয়েছেন মাত্র দু’দশকে হিন্দুকুশ-হিমালয়ে বরফের চাদরের গভীরতা কমেছে ৫-১৫ শতাংশের কাছাকাছি। যাকে আশঙ্কাজনকই বলছেন গবেষকরা। হিন্দুকুশ-হিমালয়ের দ্রুত বরফ গলন উপত্যকাবাসীদের জীবনে তো বটেই, প্রভাব ফেলবে সমতলেও। হিমবাহের গলনে তৈরি হতে পারে তুষার ধ্বস। ইতিমধ্যেই যার সাক্ষী হয়েছে উত্তরাখণ্ড। তাছাড়াও উচ্চ হিমালয়ে তুষারগলিত হ্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা লক্ষ করছেন গবেষকরা। দ্রুত বরফ গলনের ফলে শিবালিক ও নিচের সমতলভূমিতে বাড়বে বন্যার প্রকোপও। অন্যদিকে হিমালয়-হিন্দুকুশের বরফের চাদর ও নিম্ন তাপমাত্রা পরোক্ষাভাবে প্রভাবিত করে ভারতীয় উপমহাদেশের জলবায়ুকে। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান-জুড়ে নিয়ন্ত্রণ করে বৃষ্টির পরিমাণকে। দ্রুত তুষারের আচ্ছাদন কমলে ভারতের জলবায়ুতেও যথেষ্ট পরিবর্তন দেখা যাবে বলেই আশঙ্কা গবেষকদের। খনিজ তেল এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে এই দুর্যোগের গতিকে কিছুটা মন্থর করা সম্ভব বলে মত গবেষকদের।