রমজানে জমানো ফলের বীজে মাথা তুলছে অরণ্য। মাঝেরহাট থেকে জোকা, আমতলা থেকে ভাঙড়। কলকাতার বুকে সৃষ্টি হচ্ছে অরণ্য। ধীরে ধীরে সেটা বাড়ছেও। কখনও রাস্তার ধারে, নদীর চরে। শহরের বুকে এই অভিনব অরণ্য-বিপ্লবের নেপথ্যের নায়ক একজন স্কুলশিক্ষক। পিনাকী গুহ খাসনবিশ। আমতলা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বারুইপুর রোডের উপর পিরতলা হাইস্কুল। এখানেই বাংলা ও সংস্কৃত পড়ান পিনাকীবাবু। তাঁর বীজ জমানোর বীজমন্ত্র এখন ছাত্রদের মধ্যে ভাইরাল। বছরভর এখন ছাত্ররা বীজ জমায়। বর্ষা এলে সেই বীজ ছড়িয়ে দেয়। শহুরে মাটিতে তার থেকেই মাথা তোলে জঙ্গল। ২০১৯-এ পিনাকীবাবু প্রথম চেতলা জঙ্গলের কথা জানতে পারেন। জানতে পারেন, মন্টু হাইত নামের এক উকিল মাঝেরহাটে জঙ্গল তৈরি করে ফেলেছেন। পিনাকীবাবু জানালেন, “ওইখানেই প্রথম ছাত্রদের নিয়ে ফলের বীজ ছড়াই। রমজানে খাওয়া ফলের বীজ জমানোর পরিকল্পনা অবশ্য এক ছাত্র সরফরাজ শেখের। ক্লাস এইটের ওই ছাত্র ও তার সহপাঠী আকিদ হুসেন রমজানে খাওয়া ফলের বীজ জমাতে শুরু করে।” উল্লেখ্য, মাঝেরহাট থেকে নিউ আলিপুর স্টেশনের মাঝে পোর্ট ট্রাস্টের পড়ে থাকা প্রায় ১ কিলোমিটার অঞ্চলে ২০০৫-এ বীজ ছড়িয়ে আস্ত একটি জঙ্গল তৈরি করেছিলেন মন্টুবাবু। সেখানেই বীজমন্ত্রের প্রয়োগ করেন পিনাকীবাবু। তৈরি হয় ফলের গাছের বীজতলা। করোনাও থামাতে পারেনি মাস্টারমশাইকে। বাড়ির কাছে, জোকা ডায়মন্ড পার্কে রাস্তার দু’ধারে, পার্কের লাগোয়া জমিতে বর্ষার শুরুতেই ছড়িয়ে দিয়েছেন জমিয়ে রাখা বীজ। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, পেঁপে, আতা, বেদানা–সহ আরো অনেক ফলের বীজ। পিনাকীবাবু জানালেন, ফল খাওয়ার পর বীজগুলি ভাল করে ধুয়ে রোদে শুকোতে হবে। তারপর খাটের নিচে বা কোনও অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে। তাঁর বন্ধু ভাঙড়ে বীজ ছড়িয়েছেন। একইভাবে বাংলাদেশের তিতাস নদীর চরে চারা তৈরি করেছেন বাংলাদেশের এক পক্ষীবিশারদ আসিফ সাজিল।