পা হারিয়েও সংরক্ষণের কাজে

পা হারিয়েও সংরক্ষণের কাজে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা।
Posted on ৬ আগষ্ট, ২০২২

তিনি পল ডি গেলডার। অষ্ট্রেলিয়ার নৌ-বাহিনীর এক সেনা। হাঙ্গরের আক্রমণে হাত ও পা হারিয়েছিলেন। দীর্ঘ ছয় মাস লড়াইয়ের পর প্রাণে বেঁচেছিলেন। তবে তারপর সেনাবাহিনীতে ফিরলেও আধিকারিকের কাজ করতে হত তাঁকে। চলে গিয়েছিল সমস্ত রকমের অ্যাডভেঞ্চার। আর সেই অ্যাডভেঞ্চার ফিরে পেতেই চাকরি ছাড়েন তিনি। তারপর থেকে তার সহবাস হাঙ্গরদের সঙ্গে! বিভীষিকাময় স্মৃতি নিয়েও হাঙ্গর সংরক্ষণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন পল ডি গেলডার। শুরুটা হয়েছিল ২০১১ সালে। অস্ট্রেলিয়ার এক ব্রডকাস্টিং সংস্থা তাঁর কাছে দ্বারস্থ হয়েছিল একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য। ফিজি দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে তাঁকে ডিপ-সি ডাইভিং করতে হবে। সময় কাটাতে হবে হাঙ্গরদের সঙ্গে। হাঙ্গরের প্রতি আতঙ্কিত হলেও স্রেফ অ্যাডভেঞ্চারের নেশাতেই ফিজি ছুটেছিলেন তিনি। আর তখনই তাঁর এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়। নিজে হাতে হাঙ্গরদের খাইয়েছিলেন তিনি। প্রথমবারের জন্য তিনি উপলব্ধি করেছিলেন হাঙ্গররা আদতে যেচে আক্রমণ করে না মানুষকে। গেলডারের মতে হাঙ্গর সমুদ্রের অন্যতম হিংস্র প্রাণী হলেও যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে ডাইভারদের সঙ্গে। অন্তত যেচে আক্রমণ করে না তারা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন সিনেমাতে তাদের চরিত্রকে এমনভাবে দেখানো হয়, যে ছোটো থেকে ভুল ধারণা গড়ে ওঠে মানুষের মধ্যে। হাঙ্গর সম্পর্কিত একাধিক তথ্যচিত্রের নেপথ্যে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন সেনানী। সেইসঙ্গে প্রায় সারাবছরই চালিয়ে যান সচেতনতা বিস্তারের নানান অনুষ্ঠান। হাঙ্গর সংরক্ষণেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। অস্ট্রেলিয়া তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকোর নানান হাঙ্গর সংরক্ষণ প্রকল্পের সঙ্গেও জুড়ে রয়েছেন তিনি। ১৯৭০ সালের পর পাঁচ দশকে ৭১ শতাংশ কমেছে হাঙ্গরের সংখ্যা। যা সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে বলেই দাবি তাঁর। হাঙ্গর-নিধন ও খাদ্য হিসাবে হাঙ্গরের ব্যবহার বন্ধ না হলে, আর কয়েক দশকের মধ্যেই বিলুপ্তির পথে হাঁটবে এই প্রজাতি। এমনটাই আশঙ্কা তাঁর। তাই অক্লান্তভাবেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ‘শার্ক-ম্যান’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − one =