শীতকালে নতুন ধরনের ওমিক্রন হানায় কোভিড বৃদ্ধি পেতে পারে

শীতকালে নতুন ধরনের ওমিক্রন হানায় কোভিড বৃদ্ধি পেতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ অক্টোবর, ২০২২

বিগত তিন বছর ধরে শীতকাল মানুষের জীবনে বিপদ ডেকে আনছে।দেখা গেছে এই সময়ে কোভিডের বিভিন্ন প্রজাতি ডেল্টা, ওমিক্রনের  বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে।যেমন গত বছর ডেল্টার প্রকোপ যখন কমে আসছিল, তখন সারা পৃথিবী জুড়েশুরু হয়ে গেল ওমিক্রন প্রজাতির কোভিড।শীতকাল আসতে চলেছে, যদিও কোভিডের সংখ্যা কমছে, কিন্তু আমেরিকার উত্তরপূর্বের দেশগুলোতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।দুবছর আগে আমরা যে অবস্থায় ছিলাম, তা থেকে আমরা এখন অনেকটাই ভালো অবস্থায় আছি, কারণ আমাদের হাতে এখন বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা আছে, ওমিক্রন প্রতিরোধের বুস্টার ডোজ আছে।কিন্তু করোনা ভাইরাস ক্রমাগত তার চরিত্র বদলাচ্ছে, অক্টোবর মাসের ৪ তারিখে একটা ওয়েবিনারে ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি এন্ড ইনফেকশাশ ডিজিজের ডিরেক্টর অ্যান্টনি ফসি বলেছেন, যদিও আমরা আগের তুলনায় চিকিৎসাগত দিক দিয়ে এগিয়ে আছি, কিন্ত আমাদের  অনেক বেশি সাবধান হওয়া দরকার।তিনি বলেন একটা ভালো দিক হল, বেশিরভাগ লোক এই ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে, হয় তারা ভ্যাকসিন পেয়েছে, নয়তো তাদের কোভিড হয়েছে, যার ফলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম এর সাথে পরিচিত হয়েছে।এর জন্য আমাদের অ্যান্টিবডি, টি  – কোশ, সিগ্যানাল পেলেই নাক, মুখ, চোখে প্রবেশ করা করোনার জীবাণুগুলো মেরে ফেলার কাজ শুরু করে দেয়। এই ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য করোনা ভাইরাস এক জন থেকে অন্যের শরীরে যাওয়া রোধ হবে, খুব অসুস্থ হয়ে যাওয়া, বা হাসপাতালে যাওয়া, অথবা গত বছরের তুলনায় মৃত্যুর হারও হয়তো আটকানো যাবে।

কিন্তু এর পাশাপাশি খারাপ বিষয় হল, ওমিক্রন মিউটেশনের জন্য বারবার পরিবর্তিত হয়েছে, তাতে আমাদের ইমিউন সিস্টেম তাকে ঠিকমতো সনাক্ত করতে পারছে না। গরমের সময় দেখা গেল, BA.5 প্রজাতি আগের BA.2 আর BA.2.12.1. -কে সরিয়ে রোগ ছড়াতে থাকল। গবেষকরা দেখছেন, এখন BA.2 বা BA.5 থেকে সেরে ওঠা রোগীদের থেকে নেওয়া অ্যান্টিবডি পরিবর্তিত BQ.1.1 আর BA.2.75.2 – এর ওপর কাজ করছে না। বর্তমানে আমেরিকাতে খুব কম মানুষ এই নতুন প্রজাতির ভাইরাসে আক্রান্ত, কিন্তু শীতকালে যদি এই প্রজাতি ছড়াতে থাকে, তবে অনেক মানুষ এই সব নতুন প্রজাতি থেকে আক্রান্ত হতে পারে। এই শীতে ফাইজার/ বায়ো এনটেক, মডার্না, mRNA ভ্যাকসিন বের করেছে, যা করোনা ভাইরাসের প্রথম প্রজাতি ও ওমিক্রন দুটো মোকাবিলা করতে পারবে। কিন্তু, তা হাতে আসতে সময় লাগবে। কাইজার ফ্যামিলি ফাউণ্ডেশন পোলের ৩০শে, সেপ্টেম্বরের একটা সমীক্ষা অনুযায়ী, আমেরিকার প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক লোক কোভিড- ১৯ -এর বুস্টার ডোজের ব্যাপারে কিছু জানেন না, বারো বছর বয়সের ওপরে যারা তাদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে। আর একটা বড়ো সমস্যা হল, দুর্বল ব্যক্তিরা কোভিড- ১৯- এর চিকিৎসা হারাচ্ছেন। অক্টোবর মাসের একটা পরীক্ষায় বলা হচ্ছে, কিছু অ্যান্টবায়োটিক ওষুধ বেবটেলভিম্যাব, এভুশেল্ড দিয়ে মরণাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা করা হয়েছিল, সেই ওষুধগুলি গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা গেছে নতুন প্রজাতির ক্ষেত্রে কার্যকরী হচ্ছে না। FDA জানিয়েছে,প্যাক্সলোভিড অ্যান্টিভাইরাল বা এভুশেল্ড দিয়ে এখনও বেশ কিছু নতুন প্রজাতির চিকিৎসা করা হচ্ছে। কোভিড ১৯ ছাড়াও শীতকালের একটা সমস্যা হল, অন্যান্য অসুখে শ্বাসনালীর সংক্রমণ। এবছর অস্ট্রেলিয়াতে ফ্লু সংক্রমণ সময়ের আগেই শুরু হয়ে গেছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এবছর ইনফ্লুয়েঞ্জা আর কোভিড ১৯ দুইয়ের কারণে অতিমারী ছড়াবে। এর মধ্যেও, যেটা আশার আলো তা হল, বিগত কয়েক বছর যাবত মাস্কের ব্যবহার আর সামাজিক দূরত্ব অগণিত সংক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − fifteen =