মানুষ সহ সমস্ত উচ্চতর জীবের প্রতিটি কোশে, প্রত্যেকটি জিন সংখ্যায় দুটি করে বর্তমান, যাদের আমরা অ্যালিল বলে থাকি। প্রত্যেক বাবা–মা’র থেকে একটি করে অ্যালিল সন্তানের কাছে যায়। যেহেতু তারা ক্রোমোজমে যুক্ত, তাই ক্রোমোজমসংলগ্ন জিন উত্তরাধিকার সূত্রে যাওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে তা সবসময় ঘটে না।
কোশ বিভাজনের সময় হোমোলোগাস ক্রোমোজমের পুর্নমিলনের ফলে, অ্যালিলের মধ্যে জিনগত অদলবদল হয়। যান্ত্রিকভাবে বলা যায়, ক্রোমোজমের ক্রসওভারে হোমলোগাস ক্রোমোজমরা একে অন্যের সংস্পর্শে আসে ও জেনেটিক উপাদানের আদানপ্রদান হয়।
বিজ্ঞানীদের বা উদ্ভিদ প্রজননবিদদের কাছে ক্রোমোজমের ক্রসওভার একটা আকর্ষণীয় বিষয়। তারা এই ক্রসওভার পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন জেনেটিক বৈচিত্রসম্পন্ন গাছ, বেশি উৎপাদনশীল ফসল তৈরি করার চেষ্টা করেন। সফল যৌন প্রজননের জন্য প্রতি জোড়া ক্রোমোজমে অন্তত একটি ক্রসওভার হওয়া প্রয়োজন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ঠিকমতো ক্রসওভার না হওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে ডাউন সিন্ড্রোম দেখা যায়। ক্রসওভারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তা তিনটের বেশি হয়না। ক্রসওভার সংখ্যার সীমাবদ্ধতার জন্য ও ‘ক্রসওভার ইন্টারফেয়ারেন্স’-র নিয়ম অনুযায়ী ক্রোমোজম ক্রসওভারের কাছাকাছি অঞ্চলে নতুন ক্রসওভার হতে দেয় না। কিন্তু ১২০ বছর আগে ‘ক্রসওভার ইন্টারফেয়ারেন্স’ জানার পর থেকে, তা কীভাবে কাজ করে এখনও সম্পূর্ণ জানা যায় নি।
‘ক্রসওভার ইন্টারফেয়ারেন্স’– এর নতুন মডেল
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর প্লান্ট ব্রিডিং রিসার্চ, কোলন, জার্মানির রাফায়েল মার্সিয়ার, একটি নতুন ক্রসওভার ইন্টারফেয়ারেন্স-র মডেল প্রমাণ সহ প্রস্তাব করেছেন। মার্সিয়ারের সাথে অপর একদল গবেষক স্টেফানি ডুরান্ড, কিচাও লিয়ান, জুলি জিং- এর নেতৃত্বে কাজ করেছেন। অ্যারাবিডপসিস থ্যালিয়ানা নামে একটি মডেল গাছে তারা বংশগতির প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। যে প্রোটিন ক্রসওভার ঘটানো বা ক্রোমোজম যুক্ত করার জন্য দায়ী, এই গাছে তারা সেই প্রোটিনের ওপর গবেষণা করেছেন। প্রো-ক্রসওভারের প্রোটিন HEI10 -এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে বা ZYP1 – এর (হোমলোগাস ক্রোমোজমের সাইনপটিনিমাল কমপ্লেক্সের প্রোটিন) কার্যক্ষমতা কমলে তাৎপর্যপূর্ণভাবে ক্রসওভার বাড়ে।
যখন এই দুটি প্রোটিন নিয়ে একত্রে কাজ করা হল, তখন দেখা গেল ক্রসওভার প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অর্থাৎ HEI10 ও ZYP1 –একত্রে ক্রোমোজম ক্রসওভার নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখযোগ্য, এভাবে ক্রসওভার বাড়লেও তা কোশ বিভাজনকে প্রভাবিত করছে না।
HEI10 বৃদ্ধির ফলে ক্রসওভারের উল্লেখযোগ্য যে বৃদ্ধি হয় তার সাথে কীভাবে ক্রসওভার সংখ্যা তাল মিলিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, তা নতুন মডেলের সাহায্যে জার্মানির গটিংজেনে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডাইনামিকস অ্যান্ড সেল্ফ অর্গানাইজেশনের
ডেভিড জুইকার ও তার দল গবেষণা করে দেখিয়েছেন। HEI10 প্রোটিন যখন সাইনপটিনিমাল কমপ্লেক্সে ছড়িয়ে পড়ে, তার ফলে বেশ কিছু HEI10 প্রোটিনের কেন্দ্রস্থল তৈরি হয়, যা ক্রসওভার হতে সহায়তা করে। প্রথমে কিছু ছোট ছোটো প্রোটিনের কেন্দ্রস্থল তৈরি হয়, যা পরে যুক্ত হয়ে কয়েকটি বড়ো কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়, যা পরবর্তী ক্ষেত্রে ক্রসওভারের স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই মডেলে দেখানো হয়েছে, ক্রোমাটিডে প্রোটিন বৃদ্ধি পেলে কেন্দ্রস্থল বাড়বে, ফলে ক্রসওভার বাড়বে, এবং কেন্দ্রস্থলের অবস্থান থেকে ক্রসওভারের স্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
মার্সিয়ার তাদের অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, ক্রোমোজম পুর্নগঠন কীভাবে হয়, তা বিজ্ঞানীদের একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভ্রান্ত করেছে। তারা আরও ভালভাবে বুঝতে চান যে HEI10 প্রোটিন কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে তা ক্রসওভার নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষকরা প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ভালভাবে জানতে পারলে গাছের প্রজননে, যথাযথ ক্রোমোজমের পুনর্গঠনকে সহায়তা করতে পারবেন, যা উপকারী অ্যালিলগুলির সংমিশ্রণ ঘটাতে সক্ষম করবে।