অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের টাঙ্গোরা চিড়িয়াখানায় রয়েছে এক অদ্ভুত পাখি, যে শিশু মানবের কান্না অবিকল নকল করতে পারে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এই ল্যারেবার্ড (বিজ্ঞানসম্মত নাম – মেনুরা নোভাহোল্যান্ডিয়া) পাখিটির ডাকনাম দিয়েছে ‘ইচো’। কেবল শিশুর কান্না নয়, আসলে ল্যারেবার্ডের রয়েছে আশ্চর্য দক্ষতা। প্রকৃতির যে কোনো শব্দ যা তারা শোনে তা-ই এই পাখি দীর্ঘ অভ্যাসে নকল করতে পারে ভয়ানক নিঁখুত ভাবে। স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরা বলেন, ল্যারেবার্ড সমস্ত পাখিদের মধ্যে বহুমুখী, জটিল ও সুন্দর স্বরযন্ত্রের অধিকারী। অথচ এ পাখির স্বরযন্ত্র বহুস্বরে দক্ষ অন্যান্য পাখিদের চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ। চার জোড়া পেশির বদলে তিন জোড়া পেশিতেই গঠিত হয় ল্যারেবার্ডের স্বরযন্ত্র। যা আবার অপেক্ষাকৃত আদিম প্রকৃতির।
টাঙ্গোরা চিড়িয়াখানার ল্যারেবার্ডটি, যার নাম ইচো, বছরখানেক ধরে বাচ্চার কান্নার ধ্বনি নকল করছে। চিড়িয়াখানার শাখা তদারককারী লিয়ান গোলবায়স্কির ধারণা, সম্ভবত কোনো দর্শকের সঙ্গে আসা বাচ্চার কান্না শুনেই ঠিক একইরকম কান্নার ধ্বনি নকল করতে শুরু করেছে ইচো। তবে আরো মজার ব্যপার এই যে গত এক বছর চিড়িয়াখানা বন্ধ। কিন্তু ইচোর শেখায় কোনও খামতি নেই। কন্ঠে শান দিয়েই যাচ্ছে সে ক্রমাগত। আর তাতেই ইদানিং দুটি ধ্বনি সে নিখুঁত ভাবে করতে শিখেছে। একটি ড্রিল মেশিনের আওয়াজ, অপরটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ির হর্নের আওয়াজ। তবে ঠিক কেন যে এই পাখি যা শোনে সেই ধ্বনিই নকল করতে চায় তা সম্পূর্ণ জ্ঞাত নয় এখনও। তবে পক্ষীবিদদের অনুমান, পুরুষ পাখি মূলত শীতের সময় প্রজননকালে অনুরাগ জনিত কারণে ধ্বনি নকল করে, আর স্ত্রী পাখি শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রতিরক্ষা পদ্ধতি হিসেবে ধ্বনি নকল করে থাকে। শেষতক এটাই লক্ষণীয় যে, এই পাখি একটি ধ্বনি নকল করার জন্যে যে শ্রম করে গোটা বছর জুড়ে তা কেবল চমৎকার নয়, উপরন্তু শিক্ষণীয়ও বটে।