পৃথিবীর প্রাচীনতম ব্ল্যাকহোলের সন্ধান পেয়েছেন টাকসন-এর অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফেইগ ওয়াং এবং তাঁর গবেষক দল। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩০০ আলোকবর্ষ দূরে ছায়াপথের বুকের ওপর অবস্থান করা ব্ল্যাকহোলটির ভর ১৬০ কোটি সূর্যের সমান। এই ব্ল্যাকহোলটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জে০৩১৩-১৮০৬’। ওয়াং-এর দল জানাচ্ছেন ব্ল্যাকহোলটির জন্মের সময় পৃথিবীর বয়স ছিল মাত্র ৬৭ কোটি বছর। অর্থাৎ আজকের পৃথিবীর বয়সের মাত্র পাঁচ শতাংশ। এটিই এখনও অব্দি খোঁজ পাওয়া প্রাচীনতম ব্ল্যাকহোল। এর আগে যে ব্ল্যাকহোলটি প্রাচীনতম বলে স্বীকৃত ছিল তার চাইতেও জে০৩১৩-১৮০৬ প্রায় ২কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল।
কিন্ত পৃথিবীর সেই আদিকালে কীভাবে সৃষ্টি হল বৃহৎ ব্ল্যাকহোলটির?
সাধারণত নক্ষত্রের বিস্ফোরণেই সৃষ্টি হয় ছোটো আকারের বা বলা যেতে পারে বীজাকারের ব্ল্যাকহোল। ক্রমে বিপুল পরিমাণ ভর নিজের গহ্বরের মধ্যে পুরতে পুরতেই তা বৃহৎ ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টি করে। একটি সাধারণ বীজাকারের ব্ল্যাকহোল সৃষ্টির জন্যে সূর্যের হাজার গুণ ভর যুক্ত নক্ষত্রের বিস্ফোরণ প্রয়োজন হয়। ফেইগ ওয়াংরা হিসেব করে দেখেছেন যদি জে০৩১৩-১৮০৬ নামের ব্ল্যাকহোলটি আমাদের গ্যালাক্সির প্রথম নক্ষত্র সৃষ্টির পরেই জন্মে থাকে, এবং সর্বোচ্চ গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে আজকের অবস্থায় আসে, তাহলেও সেই বীজাকারের ব্ল্যাকহোল সৃষ্টির জন্যে প্রায় ১০ হাজার সূর্যের ভর প্রয়োজন ছিল। এখানেই রয়ে যায় বিস্ময়যুক্ত একটি প্রশ্ন- ওই আদি কালে গ্যালাক্সির প্রথম নক্ষত্রটিই কি বিপুল পরিমাণ ভরযুক্ত ছিল? প্রথম নক্ষত্রের অত ভর হলই বা কীভবে?
গবেষকদলের অন্যতম সদস্য জিয়াওহুই ফান এ প্রশ্নে দুটি সম্ভাব্য উত্তরের কথা বলেছেন। এক, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চলতি ধারণা অনুযায়ী জে০৩১৩-১৮০৬ এর বীজাকারের ব্ল্যাকহোলটি ছিল সাধারণের চাইতে অনেক বড়। বৃহদাকারের বীজ ব্ল্যাকহোল ‘বিপুল পরিমাণ আদি অবস্থার হাইড্রোজেন গ্যাস’ বিস্ফোরণ থেকে হতে পারে।
দুই, এও হতে পারে আদিতে বীজ ব্ল্যাকহোলটি ছিল ছোট, ছোট কোনও নক্ষত্রের বিস্ফোরণেই তার সৃষ্টি হয়। ক্রমে ব্ল্যাকহোলটি বিজ্ঞানীদের এতদিনের ধারণার চাইতেও বেশি দ্রুতহারে, দ্রুতগতিতে ভর সংগ্রহ করেছে ও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এসব সম্ভাবনার কোনোটিই প্রমাণিত নয়। ফান বলেছেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের খুব কম ভরযুক্ত ব্ল্যাকহোল স্টাডি করে নিপুণভাবে দেখতে হবে কীভাবে বীজাকারের ব্ল্যাকহোল বৃদ্ধি পায়।