Y-ক্রোমোজোম অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে!

Y-ক্রোমোজোম অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ মে, ২০২৪

লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূলত কাজ করে Y ক্রোমোজ়োম। Y ক্রোমোজ়োমের সঙ্গে একটি X ক্রোমোজ়োম থাকলে পুরুষ বলে নির্ধারিত হয়। Y ক্রোমোজ়োম না থাকলে দু’টি X ক্রোমোজ়োম, অর্থাৎ নারী। গল্পটা আসলে এত সরল নয়। লিঙ্গ নির্ধারণ একগুচ্ছ ফ্যাক্টর দিয়ে তৈরি এক জটিল সার্কিটের কার্যকলাপের ফল। কিন্তু গবেষণা বলছে মানুষের Y ক্রোমোজোমের অবক্ষয় হচ্ছে এবং কয়েক মিলিয়ন বছরের মধ্যে এটি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। ফলত আমরা যদি একটি নতুন সেক্স জিন তৈরি করতে না পারি তাহলে আমাদের অর্থাৎ মানুষের বিলুপ্তি ঘটতে পারে। কিন্তু আশার খবর হল ইঁদুরের দুটি প্রজাতি ইতিমধ্যেই তাদের Y ক্রোমোজোম হারিয়েছে এবং আজও বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সের সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র অনুসারে ছোটো ছোটো কাঁটাওয়ালা ইঁদুর একটি নতুন পুরুষ-নির্ধারক জিন তৈরি করেছে।
X-ক্রোমোজমে প্রায় ৯০০টি জিন রয়েছে যা লিঙ্গ নির্ধারণ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। কিন্তু Y ক্রোমোজমে প্রায় ৫৫টি জিন রয়েছে এবং প্রচুর সাধারণ পুনরাবৃত্তিমূলক ডিএনএ বা নন-কোডিং ডিএনএ রয়েছে। গর্ভধারণের প্রায় ১২ সপ্তাহ পরে, Y ক্রোমোজমে উপস্থিত এক মাস্টার জিন টেস্টিসের বিকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভ্রূণের এই টেস্টিস, টেস্টোস্টেরন এবং অন্যান্য পুরুষ হরমোন তৈরি করে, যা নিশ্চিত করে যে শিশুটি একটি ছেলে হিসাবে বিকাশ লাভ করবে। এই জিনটিকে ১৯৯০ সালে SRY বা সেক্স রিজিওন অন Y, হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এটি SOX9 নামক একটি জিন দিয়ে শুরু করে একটি জেনেটিক পাথওয়েকে ট্রিগার করে যা সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে পুরুষ নির্ধারণের চাবিকাঠি, যদিও এটি সেক্স ক্রোমোজোমের উপর অবস্থিত নয়। বেশির ভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীরই মানুষের মতো X এবং Y ক্রোমোজোম থাকে; যেখানে X-ক্রোমোজোমে অনেক জিন উপস্থিত থাকে এবং Y ক্রোমোজোমে SRY সহ আরও কয়েকটি জিন থাকে। বিবর্তন অনুসারে বলতে গেলে – মানুষের ক্ষেত্রে Y ক্রোমোজোম অদৃশ্য হয়ে যাওয়া আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে অনেক জল্পনা তৈরি করে। কিছু টিকটিকি এবং সাপে শুধুমাত্র স্ত্রী-প্রজাতি দেখা যায় এবং পার্থেনোজেনেসিস নামে পরিচিত এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নিজস্ব জিন থেকে ডিম তৈরি করতে পারে। কিন্তু এটি মানুষ বা অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ঘটতে পারে না কারণ আমাদের কমপক্ষে ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ “ইম্প্রিন্টেড” বা ছাপযুক্ত জিন রয়েছে যেগুলো শুধুমাত্র শুক্রাণুর মাধ্যমে বাবার কাছ থেকে এলেই কাজ করে। প্রজননের জন্য, আমাদের শুক্রাণুর প্রয়োজন আর তার জন্য পুরুষদের প্রয়োজন, যার অর্থ Y ক্রোমোজোমের অবলুপ্তি মানব জাতির বিলুপ্তির সূচনা করতে পারে।
একটি বিকল্প সম্ভাবনা উঠে আসতে পারে – মানুষের মধ্যে একটি নতুন লিঙ্গ নির্ধারণকারী জিন উদ্ভাবন হতে পারে। সেক্ষেত্রে একটি নতুন লিঙ্গ নির্ধারণকারী জিনের সাথে বিবর্তনের ঝুঁকি থেকে যায়। যদি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে একাধিক নতুন সিস্টেম গঠিত হয়? সেক্ষেত্রে, ১১ মিলিয়ন বছর পরে পৃথিবীতে হয়তো কোনও মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না অথবা এমনও হতে পারে– বিভিন্ন মানব প্রজাতি দেখা যাবে যাদের ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গ নির্ধারণ সিস্টেম থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 11 =