অঙ্কের হোমওয়ার্ক বাচ্চাদের ক্ষতি করতে পারে

অঙ্কের হোমওয়ার্ক বাচ্চাদের ক্ষতি করতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ এপ্রিল, ২০২৪

বাচ্চাদের মধ্যে অনেকের কাছেই অঙ্ক বিরক্তিকর, অনেক সময় লাগে, রোজ করার জন্য সবাই চাপ দেয়, কিন্তু অঙ্ক করতে গিয়ে কিছু না কিছু ভুল হয়েই যায় তখন আর করতে ইচ্ছে করেনা। ছোটোবেলায় যাও বা অঙ্ক বোঝা যায়, ভালো নম্বর পাওয়া যায় কিন্তু ক্লাস থ্রি ফোর হতে না হতেই নানা ধরনের অঙ্ক বাচ্চাদের মাথা গুলিয়ে দেয়। রোজ অঙ্কের হোম টাস্ক করতে তাদের দরকার লাগে বাবা মায়ের সাহায্য। তাতেও যে সব বাচ্চা সবটা বুঝে নিজে অঙ্ক করতে পারে তা নয়। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানাডার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কানাডার গ্রেড থ্রি-তে পড়া বাচ্চাদের রোজ অঙ্কের হোমটাস্ক, তা নিয়ে বাচ্চার ও তার বাড়ির লোকের ইন্টারভিউ নিয়ে দেখেছেন বেশ কঠিন অঙ্ক বাড়িতে করতে দিলে তা অভ্যাসের বদলে বাচ্চার মনে এক ভয় ভীতি তৈরি হয়, যা থেকে তাদের অঙ্কের প্রতি একটা অনীহা তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপিকা লিসা ও’কিফ বলেছেন, অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো, গণিত শিক্ষার পদ্ধতি সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছে। কিন্তু বাবা-মায়েরা যখন দেখেন তাদের আগে শেখা অঙ্ক করার পদ্ধতি আর বাচ্চাদের অঙ্ক শেখার পদ্ধতি ভিন্ন তখন তাদের মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয় আর তাদের ওপরও চাপ সৃষ্টি হয়। গবেষকদের মতে এতে একটা “প্রজন্ম জুড়ে নেতিবাচকতা” তৈরি হতে পারে, এই গবেষণায় মায়েরা মূলত হোমটাস্কে সাহায্য করেছেন। যখন তাদের কাছে অঙ্কের টাস্ক কঠিন বলে মনে হয়েছে তখন গণিতের বিষয়ে নেতিবাচক স্টিরিওটাইপগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যেমন মেয়েরা অঙ্কে বিশেষ ভালো নয়। এই নেতিবাচক প্রভাব বাচ্চাদের পেশা ও রেজাল্টে ছাপ ফেলে। কঠিন অঙ্কের টাস্ক বাড়িতে করতে দিলে তা বাচ্চাদের খেলার সময়, ঘুমোনোর সময় কমাচ্ছে, পরিবারের নিজস্ব সময়ও কমছে তার সাথে অঙ্ক না পারার জন্য হতাশা, বিষণ্ণতা বাচ্চাদের ঘিরে ধরছে।
এই গবেষণার নমুনার সাইজ ছোটো হলেও গবেষকরা বলছেন যে এর ফলাফল শিক্ষার সাধারণ ক্ষেত্রের সাথে মেলে। গণিতের হোমওয়ার্ক যথাযথভাবে সেট করা এবং তা এমনভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন যাতে তা ছোটো বাচ্চাদের অঙ্ক থেকে দূরে সরিয়ে দেয় না। তাই হোময়ার্ক পলিসি আর চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য আনা প্রয়োজন। হোমওয়ার্কে পড়া তৈরি করা ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা যেমন স্বাধীনভাবে নিজের কাজ করা, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং স্ব-শৃঙ্খলার বিকাশ হয় বলে মনে করা হয়, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার সারা ম্যাকডোনাল্ড জানিয়েছেন তাদের অধ্যয়নে গৃহীত পারিবারিক ইন্টারভিউয়ের অভিজ্ঞতা থেকে এগুলো বাস্তবে ঘটে বলে মনে হয়না। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ জার্নাল অব সোসিওলজি অব এডুকেশনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =