অনাহারে নাহি খেদ!!

অনাহারে নাহি খেদ!!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ আগষ্ট, ২০২৪

‘হলোডোমোর’ কি জানেন? খিদেতে মৃত্যু। ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইউক্রেনে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই দুর্ভিক্ষ মানুষের তৈরি – পাশবিকতার আরেক রূপ। অনাহারে, মারা যান লক্ষাধিক মানুষ। এই মর্মান্তিক ইতিহাস, ইউক্রেনবাসীরা ‘হলোডোমোর’ হিসাবে স্মরণ করে প্রতিবছর। ১৯৩২ এবং ১৯৩৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউক্রেন এ ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। ইউক্রেন জুড়ে ঘনিয়ে এসেছিল অপুষ্টির কালো মেঘ।

যুগ কেটে গেলেও, এই অপুষ্টির কালো মেঘ, দীর্ঘকালীন একটা প্রভাব ফেলে গেছে। এক সমীক্ষা জানিয়েছে, ভ্রূণের বৃদ্ধির উপর অপুষ্টির প্রতক্ষ্য প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমানে ইউক্রেনের জাতীয় ডায়াবেটিস রেজিস্ট্রির এর একটি বিশ্লেষণ বলছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ প্রদেশে (এই কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ যখন সবচেয়ে বেশি) সেই সময়ে যে মায়েরা গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে ছিল, তারা যে শিশুর জন্ম দেন তাদের উপর এমন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সেইসব শিশুদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্যদের তুলনায় দ্বিগুণ ছিল। দুর্ভিক্ষের চার থেকে সাত দশকের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় করা গেছে।

হলোডোমোরের উপর করা অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্ভিক্ষ-পীড়িত এলাকার পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় ১.৫ গুণ বেশি। গবেষকদের মতে এই স্টাডি, বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জনস্বাস্থ্যের উপর সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের অনুমান, ২০২৩ সালে, প্রায় ১১ মিলিয়ন ইউক্রেনবাসী খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়। প্রায় ১৮৭০০০ শিশুর জন্ম হয় ঐ একই সালে। গবেষকরা সতর্ক করেছেন যদি হলোডোমোরের মতো আজকের দুর্ভিক্ষও ভ্রূণের বিকাশের ক্ষেত্রে একই রকম আন্তঃপ্রজন্মগত প্রভাব ফেলে, তবে আগামী কয়েক দশকে আরও ১৯০০০ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। এই গবেষণায় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে কীভাবে দেশব্যাপী গর্ভাবস্থায় এবং শৈশবে অপুষ্টি, পরবর্তী প্রজন্মের উপর দীর্ঘকালীন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে অপুষ্টি, বিপাকীয় রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। গবেষণাটি সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।