অপাচ্য জমাট বেঁধে অন্ত্রে ‘পাথর’

অপাচ্য জমাট বেঁধে অন্ত্রে ‘পাথর’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ জুলাই, ২০২৪
অন্ত্রে-পাথর

হ্যারি পটারের প্রথম উপন্যাসে ছাগলের বেজোয়ার নিয়ে প্রশ্ন করে তাকে ঘাবড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই বেজোয়ার কী? হজম না হওয়া উপাদানগুলো যখন শক্তভাবে ড্যালা পাকিয়ে পেটে আটকে থাকে তাদের বেজোয়ার বলে। বহুবছর আগে থেকে বেজোয়ার নিয়ে নানা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। এগুলো বিষ থেকে মানুষকে রক্ষা করে, এটা এক ধরনের শুভ বস্তু, এমনকি লণ্ডনের হান্টেরিয়ান মিউজিয়ামে বেজোয়ার সংরক্ষিত রয়েছে। যদিও এই সমস্ত ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। ছাগল এবং অন্যান্য প্রাণীর পেটে যেমন এদের পাওয়া যায়, তেমন মানুষেরও যেকোনো বয়সে বেজোয়ার হতে পারে। এগুলো পেটে, অন্ত্রে, খাদ্যনালীতে এমনকি শ্বাসনালীতেও জমাট বাঁধতে পারে।
বেজোয়ারের আকার ও ওজন নানারকম হতে পারে। এবছর জুলাই মাসে, ইকুয়েডরের মানবিতে ২৪ বছর বয়সী মহিলার পেট থেকে অস্ত্রোপচার করে দুই পাউন্ড ওজনের ১৬ ইঞ্চি চুলের ড্যালা সরানো হয়েছে। মার্চ মাসে, নিউক্যাসলের ডাক্তাররা সাত বছর বয়সী মেয়ের পেট থেকে ৬ ইঞ্চি চুলের বল সরিয়েছেন। ডাক্তারি রিপোর্ট অনুসারে, এটা মেয়েটির অন্ত্রের ৮০ শতাংশ জুড়ে ছিল। বেজোয়ারগুলো পাথুরে উপাদানে পরিণত হয়, হজম হয়না বা অন্ত্রের প্রাচীরে শোষিত হয় না। ফলে পাথুরে উপাদান অন্ত্রের ফাঁপা জায়গা লুমেনের ভেতরে জমা হয়, ধীরে ধীরে তা আকারে বাড়ে। বেজোয়ার হওয়ার জন্য কিছু শর্ত লাগে, অপাচ্য উপাদান খাওয়া, তার সাথে ধীর গতিশীল পাচনতন্ত্র, যার অর্থ অন্ত্র বা মল এই উপাদান শরীর থেকে নিষ্কাশিত করতে পারেনা। উদ্ভিদের সেলুলোজ আমাদের হজম হয় না তার থেকে ফাইটোবেজোয়ার হতে পারে। পারসিমন ফল কাঁচা অবস্থায় বেশি খেলে তার ট্যানিন থেকে বেজোয়ার হতে পারে। আরও অনেক কিছু থেকেই এটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যেমন ফল, সবজি, দুধ, ওষুধ, চিউইংগাম, কাগজ, প্লাস্টিক পেটে চলে গেলে বেজোয়ারে পরিণত হতে পারে।
অনেকের অপাচ্য বস্তু খাওয়ার প্রবণতা থাকে, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের। এই প্রবণতা পিকা নামে পরিচিত। চুল থেকে হওয়া ট্রাইকোবেজোয়ার চুলের বলের মতো নরম থাকে, যা দীর্ঘ বছর ধরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। অনেককেই অস্ত্রপোচার করে এই চুলের ড্যালা পেট থেকে বাদ দিতে হয়। পিত্তথলির পাথর এবং রেনাল ক্যালকুলির পাথরের মতো, বেজোয়ার ছোটো জায়গায় আটকে না গেলে কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করেনা, সে অবস্থায় বছরের পর বছর থেকে যায়। যদি বেজোয়ার থেকে গা গোলানো ভাব, পেটে ব্যথা, বমি, গ্যাস্ট্রিক আলসার বা রক্তপাতের মতো সমস্যা সৃষ্টি হয় তবে বেজোয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে সরানো হয়। বেজোয়ার খুব ছোটো হলে এন্ডোস্কোপের মাধ্যমে অপসারণ করা যেতে পারে। বড়ো বেজোয়ার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। পারসিমন স্টোন সহ কিছু বেজোয়ার গলানোর জন্য লবণের দ্রবণ, এনজাইম কোলা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যে বস্তু পেটের পাথর গলিয়ে দিচ্ছে তা আমাদের শরীরের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে একবার ভেবে দেখুন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + 1 =