অভিনব প্রযুক্তিতে কেরলে আবিষ্কৃত ‘ভাসমান বাড়ি’

অভিনব প্রযুক্তিতে কেরলে আবিষ্কৃত ‘ভাসমান বাড়ি’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌।
Posted on ৩ জুলাই, ২০২২

উত্তর ভারতই হোক কি উত্তর-পূর্বের আসাম বা দক্ষিণের কেরল— প্রত্যেকবছর বন্যার প্রকোপে আক্রান্ত হচ্ছে এই রাজ্যগুলো। এবছরেও বন্যায় বিপর্যস্ত অসম। প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক। এবার প্রযুক্তির সহায়তায় অভিনব এক আবিষ্কার কেরলের দু প্রযুক্তিবিদের। তিরুবন্তপুরমের বাসিন্দা দুই প্রযুক্তিবিদ নানমা গিরিশ এবং বেন জর্জ তৈরি করে ফেললেন ভাসমান বাড়ি! তাঁদের তৈরি এই বাড়িকে উভচর বাড়িও বলা যায়। সাধারণ বাড়ির মতো হলেও বন্যার সময় ভেঙে পড়বে না এই বাড়ি। প্লাবনের জলে ভেসে থাকবে। ভেনিসের ভাসমান বাড়ির মতো। বন্যার জল সরে গেলে সেই বাড়ি আবার মাটির ওপর স্থাপিত হয়ে যাবে।
নানমা এবং জর্জের এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৮-য়। প্রযুক্তিবিদ্যার স্নাতকোত্তর স্তরের প্রোজেক্ট হিসাবে এই অভিনব বাড়ি তৈরি করা শুরু করেছিলেন দুই প্রযুক্তিবিদ। তবে তখন সাফল্য পাননি তারা। স্নাতকোত্তর পাশ করার পর, মোটা অঙ্কের চাকরি ছেড়ে জর্জ ও নানমা খুলে ফেলেন একটি স্বতন্ত্র নির্মাণ সংস্থা— ‘নেস্ট অ্যাবাইড’। অর্থ উপার্জনের জন্য সাধারণ বাড়ি ও অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করলেও, তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল ভাসমান বাড়ি সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া। ২০২১-এ ভাসমান বাড়ির প্রথম সক্রিয় প্রোটোটাইপ তৈরি করেন জর্জ ও নানমা। কেরলের কোট্টায়াম জেলার কুরাভিলাংগদ অঞ্চলে স্থাপিতও হয় এই বাড়ি। কংক্রিটের তৈরি ফাঁপা প্ল্যাটফর্ম সংযুক্ত করা হয়েছে এই বাড়ির নিচে। প্রযুক্তিবিদ্যার ভাষায় যার নাম বুওয়েন্ট চেম্বার। বন্যার জলের উচ্চতা ৬ ফুট অতিক্রম করলেই এই প্ল্যাটফর্ম অনায়াসে ভাসিয়ে রাখতে পারবে দ্বিতল বাড়িকে। আশ্চর্যের বিষয়, সাধারণ বাড়ির তুলনায় এই বাড়ি তৈরির খরচও অনেকটাই কম। তরুণ প্রযুক্তিবিদদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১৫ লক্ষ টাকাতেই অনায়াসে তৈরি করা সম্ভব ৬০০ বর্গফুট ক্ষেত্রের দ্বিতল উভচর বাড়ি।
‘অ্যাম্ফিনেস্ট’-খ্যাত এই বাড়ি ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেস্কো এবং ডেলফট বিশ্ববিদ্যালয়ের। জলবায়ুর চরম পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে এই বাড়ি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সেটা সময় বলবে। তবে আগামীদিনে বন্যার মোকাবিলায় কার্যকরী হয়ে উঠবে এই ভাসমান বাড়ি, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।