অস্ত্রোপচারে চোখের তারার রঙ পরিবর্তনে ক্ষতি

অস্ত্রোপচারে চোখের তারার রঙ পরিবর্তনে ক্ষতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

আমরা নিজেকে সুন্দর করে তোলার জন্য কি না করি? দাঁতের গঠন ঠিক করতে দাঁত ঘষে ব্রেস পড়ি, এক জায়গার ত্বক অন্য জায়গায় লাগিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজের মুখাবয়ব পাল্টাই। নিজেকে সুন্দর করতে আমরা মোটেও ঝুঁকি নিতে পিছপা নই। এখন এই সৌন্দর্য্য তালিকাতে নতুন সংযোজন চোখের তারার রঙ পরিবর্তন।
এতে আইরিস বা মণিকে ঘিরে চোখের তারার রঙ পরিবর্তন করা হয়। চোখের তারায় ইমপ্ল্যান্ট বসিয়ে, বা তাতে ট্যাটু করে বা গাঢ় রঙ করে মানুষ নিজের চেহারার সাথে মানানসই করার চেষ্টা করে। কিন্তু এর ভয়ানক ফলাফল হতে পারে, মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। চোখের তারা দুস্তরের মসৃণ পেশি দিয়ে তৈরি। এই পেশিগুলো আলো নিয়ন্ত্রণের জন্য চোখের মণি ও তারাকে সংকুচিত ও প্রসারিত করে। আর এই পেশি সংবেদনশীল রিসেপ্টর কোষকে রক্ষা করে যাতে তা ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। চোখের তারার দুটো মেলানিনযুক্ত রঞ্জকের স্তর থাকে যা তারার রঙ স্থির করে। ছ ধরনের তারার রঙ দেখা যায় – বাদামী, কালো, হাজেল, সবুজ, নীল, গ্রে। যদি দুটো স্তরেই প্রচুর রঞ্জক থাকে তবে চোখের তারার রঙ গাঢ় হয়। এই রঙ বিশ্বের ৮০% মানুষের চোখের তারায় দেখা যায়। সামনের স্তরে কম রঞ্জক থাকলে হ্যাজেল বা সবুজ রঙ হয়, সবুজ রঙ সবচেয়ে কম মানুষের চোখে দেখা যায় (মাত্র ২%)। যাদের চোখের সামনের স্তরে খুব কম বা মেলানিন থাকে না তাদের নীল বা ধূসর চোখ হয়।
ছানি অপরেশন চোখের তারায় করা হয়। চোখের তারার ত্রুটি দূর করতেও অপরেশন করা হত। কিন্তু কসমেটিক সার্জারি করে তারার রঙ পরিবর্তন হাল ফ্যাশান। চোখের তারার রঙ হালকা করা যায়, কারণ মেলানিনের পরিমাণ কমানো সম্ভব, কিন্তু তাকে বাড়ানো যায় না। এর জন্য কর্নিয়াতে ছোটো সূচের সাহায্যে হালকা করে কেটে কেরাটোপিগমেন্টেশন করা হয়। কেরাটোপিগমেন্টশন বা লেসার দু পদ্ধতিতেই চোখে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর থেকে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তন হতে পারে। অন্ধত্ব, কর্নিয়াতে ফুটো, পাতলা হয়ে যাওয়া, গ্লুকোমা, ছানি হতে পারে। কেউ কেউ সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট বসিয়েও তারার রঙ পাল্টান। একজন মডেল এই পদ্ধতিতে চোখের তারার রঙ পাল্টানোর পর তার দৃষ্টিশক্তি এখন ৯০ বছর বয়সী মানুষের সমান, একচোখে ৫০% , ওপর চোখে ৮০% দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে। এর থেকে চোখের আকার পরিবর্তন হতে পারে, অপটিক নার্ভে চোখের তরল চাপ দেয়। আর এটা থেকে অন্ধত্ব আসতে পারে। নিজেকে সুন্দর দেখাতে চোখের রঙ পরিবর্তন করবেন নাকি দৃষ্টিশক্তির ওপর জোর দেবেন সিদ্ধান্ত নিন। তবে একটা উপায় আছে, চোখ বাঁচিয়ে রঙিন কন্ট্যাক্ট লেন্স পরতে পারেন।