এই প্রথম গবেষকরা অ্যান্টার্কটিকায় পৃথিবীর এক প্রাচীন রহস্য উন্মোচন করলেন। বরফের চাদরে আচ্ছাদিত ওই মহাদেশে তারা অ্যাম্বারের একটি টুকরো আবিষ্কার করেছেন। এই নতুন অধ্যয়নে দেখা গেছে, সমুদ্রতলের নীচে পাওয়া ছোট্টো সোনার খণ্ডটিতে প্রাচীন উদ্ভিদ ও সম্ভাব্য কীটপতঙ্গের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবশেষ রয়েছে যা ৯ কোটি বছর আগে পৃথিবীর জলবায়ু এবং বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে নতুন তথ্য দিতে পারে।
অ্যাম্বার হল জীবাশ্ম বৃক্ষ রজন। গাছ থেকে যখন এই রস বেরোয় তাতে পোকামাকড়, ছোটো প্রাণী বা অন্যান্য জৈব পদার্থ আটকে যায় এবং সময়ের সাথে তা শক্ত হয়ে যায়। রজনের স্বচ্ছ সোনালি-হলুদ আবরণ ভেদ করে ভিতরে বায়ু ঢুকতে পারে না তাই এর ভিতরে যা কিছু আটকে যায় তা যেমন পুরোপুরি সংরক্ষিত হয় তা আবার বাইরে থাকে দেখাও যায়। ঠিক যেন একটা স্বচ্ছ টাইম ক্যাপসুল। এখনও পর্যন্ত, অ্যান্টার্কটিকা বাদে পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশে জীবাশ্ম রজন পাওয়া গেছে। তবে এই প্রথম অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিম উপকূলে পাইন আইল্যান্ড হিমবাহের তীরে, প্রায় ৩১০০ ফুট গভীরে, সমুদ্রতলের নীচে সংগৃহীত পলির মধ্যে গবেষকরা প্রায় ০.০০২ ইঞ্চি ব্যাসের একটি ছোটো টুকরো রজন শনাক্ত করেছেন। ক্ষুদ্র খণ্ডটি প্রায় ৯ কোটি বছর আগে ক্রিটেসিয়াস সময়কালের। সেই সময়ে, অ্যান্টার্কটিকার বড়ো অংশে ছিল সবুজ গাছপালা। ঠিক যেমন উষ্ণ আবহাওয়ায় আজ নিউজিল্যান্ডে পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে সমুদ্রতল থেকে প্রথম যে পলি সংগৃহীত হয়েছিল তা অধ্যয়ন করে দেখা গেছে সেখানে উদ্ভিদের শিকড়, ফুলের পরাগ, স্পোর এবং অন্যান্য অবশিষ্টাংশের জীবাশ্ম রয়েছে, যা প্রমাণ করে অ্যান্টার্কটিকায় ক্রেটেসিয়াস যুগে রেইনফরেস্ট ছিল। তবে যখন গবেষকরা অবশিষ্ট উপকরণগুলোকে ছোটো ছোটো টুকরোতে ভাগ করে ফ্লুরোসেন্ট মাইক্রোস্কোপি ব্যবহার করে প্রতিটি স্ক্যান করেন তখন তারা রজনের খণ্ডটি আবিষ্কার করেন। বিশ্লেষণে রজনের মধ্যে আণুবীক্ষণিক গাছের গুঁড়ির অবশিষ্টাংশ এবং রজন প্রবাহের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরজীবীর আক্রমণ বা দাবানলের কারণে গাছের গুঁড়িতে হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করতে গাছ এই রজন ব্যবহার করত। গবেষকদের মতে রজনটি উচ্চ মানের এবং বিগত ৯ কোটি বছর ধরে এটি সমুদ্রের নীচে পৃষ্ঠের কাছে ছিল নাহলে সেটি তাপের কারণে গলে যেত। গবেষকরা বিশ্বাস করেন এই ধরনের অনুসন্ধান প্রাচীন রেইনফরেস্ট এবং সেখানে বসবাসকারী ডাইনোসরদের সম্পর্কে অজানা আরও তথ্য তুলে ধরতে পারবে।