পছন্দের ওষুধ নিরাপদ মনে করে যথেচ্ছ খেয়ে ফেলার এই অভ্যাসই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে দিনের পর দিন। যে অ্যান্টিবায়োটিকের রোগ সারানোর কথা ছিল, সেটিই ক্রমশ প্রতিরোধী করে তুলছে শরীরকে। ফলে দেখা দিচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণ, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স’। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, টাইফয়েড জ্বর সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ব্যাপকভাবে ওষুধে প্রতিরোধী হয়ে উঠছে এবং দ্রুত প্রতিরোধী নয় এমন স্ট্রেনগুলো বদলে দিচ্ছে। উন্নত দেশে টাইফয়েড জ্বর বিরল হলেও এই প্রাচীন রোগ সহস্রাব্দ ধরে মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে আর এই আধুনিক বিশ্বে এখনও এই রোগ থেকে বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেশি। বর্তমানে, সালমোনেলা এন্টারিকা সেরোভার টাইফি (এস টাইফি) ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া টাইফয়েডের চিকিত্সার একমাত্র উপায় হল অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। তবুও বিগত তিন দশক ধরে, অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে এবং তা বিশ্বে ছড়িয়েও পড়ছে। ২০২২ সালের একটি সমীক্ষায়, গবেষকরা নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এস টাইফি স্ট্রেনের জিনোম বিশ্লেষণ করে দেখেছেন সেগুলো ব্যাপকভাবে ড্রাগ-প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন এক্সডিআর টাইফি ( extensively drug-resistant) ।
এক্সডিআর টাইফি শুধুমাত্র অ্যাম্পিসিলিন, ক্লোরামফেনিকোল এবং ট্রাইমেথোপ্রিম/সালফামেথক্সাজোলের মতো পরিচিত সারির অ্যান্টিবায়োটিকের জন্যই প্রতিরোধী নয়, এটি ফ্লুরোকুইনোলোনস এবং তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিনের মতো নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। উদ্বেগজনকভাবে, এই স্ট্রেনগুলো বিশ্বব্যাপী দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
যদিও বেশিরভাগ এক্সডিআর টাইফির ঘটনা দক্ষিণ এশিয়া থেকে এসেছে, তবে গবেষকরা ১৯৯০ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রায় ২০০টি ঘটনা চিহ্নিত করেছেন। বেশিরভাগ স্ট্রেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছে তবে টাইফয়েড সুপারবাগ যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাতেও পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর ধরে ওষুধ-প্রতিরোধী টাইফয়েড সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন। ২০১৬ সালে, পাকিস্তানে প্রথম এক্সডিআর টাইফয়েড স্ট্রেন শনাক্ত করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের মধ্যে, এটি সে দেশে বিপুলভাবে বিস্তার লাভ করে। কিন্তু ২০০০ সালের গোড়ার দিকে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং সিঙ্গাপুরে যে সব সংক্রমণ দেখা যায় তার মধ্যে ৮৫% কুইনোলোনসকে প্রতিরোধ করে। সে সময় থেকেই সেফালোস্পোরিনের প্রতিও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। বর্তমানে শুধুমাত্র দুয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিকই রয়েছে তবে চিকিৎসকদের মতে সে কটিও বেশি দিন কাজ করবে না। ২০২২ সালের গবেষণায় দেখা গেছে কিছু পরিব্যক্তির ফলে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের প্রতিও প্রতিরোধী হয়ে উঠছে এই ব্যাকটেরিয়া। এবং তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে তবে ২০% টাইফয়েড প্রাণঘাতী হতে পারে এবং বর্তমানে বছরে ১ কোটি ১০ লাখের মতো টাইফয়েড সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।