
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মারচিসন ওয়াইডফিল্ড অ্যারে বেতার দূরবীক্ষণ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা একটি দূরদর্শনের সংকেত পেয়েছেন । ১৩ হাজার কোটি বছরের বেশি সময় ধরে মহাকাশ অতিক্রম করে আসা বেতার সংকেত দেখার জন্য এটি তৈরী হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া সরকার পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় একটি ‘বেতার নীরব অঞ্চল’ তৈরি করেছে। এই অঞ্চলটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে উল্লেখিত বেতার দূরবীক্ষণের মতো, মুঠোফোন, ওয়াইফাই এবং অন্যান্য বেতার সংকেতের মতো জিনিসের ব্যাঘাত ছাড়াই বিজ্ঞানীরা মহাকাশ থেকে আসা খুব মৃদু বেতার তরঙ্গ শুনতে পারে। পাঁচ বছর ধরে বেতার সংকেত নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন সংকেতটি আকাশের মধ্যে দিয়ে চলাচল করছে । প্রথমে তারা ভেবেছিল হয়তো বা সত্যি সত্যি এলিয়েনরা দূরদর্শনের সংকেত প্রতিফলিত করছে। মুখ্য গবেষক জোনাথন পোবার
বুঝতে পেরেছিলেন এটি সম্ভবত একটি বিমান থেকে প্রতিফলিত হচ্ছে ।
গবেষক জেড ডুচার্ম বর্ণনা করেছেন, ধরুন আপনি রাতের খাবারের সময় টেবিলের অন্যপ্রান্ত থেকে আপনার বন্ধুর কথা শুনতে চাইছেন, কিন্তু একটি বাচ্চার চিৎকারের জন্য ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছেন না । ঠিক একইভাবে দূরবীনগুলি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করার সময় বিভিন্ন বাধার কারনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। সেজন্য অনেক সময় বিজ্ঞানীদের অপ্রয়োজনীয় অনেক তথ্য বাদ দিতে হয়।
বিজ্ঞানীরা মহাকাশে বিভিন্ন সংকেত পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বুঝতে পারেন এটি বিমান থেকে আসা প্রতিফলন। এই কাজে তারা দুটি কৌশল ব্যবহার করেছিলেন । একটি হল
নিয়ার ফিল্ড কারেকশন ( নিকটবর্তী ক্ষেত্র সংশোধন)। এটি জিনিসগুলিকে আরও কাছ থেকে দেখতে সাহায্য করে।
অন্যটি হল বিমফর্মিং। এটি একটি নির্দিষ্ট এলাকার উপর দূরবীক্ষণ কেন্দ্রীভূত করার জন্য একটি কেন্দ্রালোক( স্পটলাইট) ব্যবহার করার মতো, যার ফলে কাছাকাছি বাধাগুলি শনাক্ত করা সহজ হয়।নিয়ার ফিল্ড কারেকশনের সাথে বিমফর্মিং ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা বিমান বা উপগ্রহের মতো নিকটবর্তী বেতার নির্গমনকারী বস্তুর উচ্চতা খুব ভালোভাবে নির্ধারণ করতে পারে।
এই কৌশল ব্যবহার করে বোঝা যায় বস্তুটির গড় উচ্চতা আনুমানিক ১১.৭ কিলোমিটার। যা থেকে বোঝা যায় এটি সম্ভবত একটি বিমান, কারণ বিমানগুলি সাধারণত ৯.৪ থেকে ১১.৬ কিলোমিটার উচ্চতায় উড়ে । আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য, তারা এটি কত দ্রুত গতিতে চলছে তাও পরীক্ষা করেন । তাদের গণনার উপর ভিত্তি করে, বস্তুটি প্রায় বিমানের গতির মতোই ৭৯২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে ভ্রমণ করছিল। গবেষকরা দেখেন প্রতিফলিত সংকেতটি অস্ট্রেলিয়ান টিভি চ্যানেল ৭-এর মতো একই কম্পাঙ্ক যুক্ত। দুর্ভাগ্যবশত উড়ান খতিয়ানের অভাবে তারা নির্দিষ্ট বিমানটি সনাক্ত করতে পারেননি।
বিজ্ঞানীরা জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য থেকে নানা সাংকেতিক বাধা অপসারণ করার চেষ্টা করছেন, যেমন বিমানের উপর থেকে প্রতিফলিত সংকেত। এই বাধাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে নির্মূল করলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আরও তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই প্রযুক্তি এরা উপগ্রহ থেকে আসা বাধার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে চান। তবে কক্ষপথে উপগ্রহর সংখ্যাবৃদ্ধি এবং মানুষের তৈরি রেডিও সংকেতের কারণে কিছু বিজ্ঞানী রেডিও দূরবীক্ষণগুলিকে চাঁদের মতো শান্ত পরিবেশে স্থানান্তর করার কথা ভাবছেন। রেডিও সংকেতের বাধাগুলি আরও ভালভাবে চেনা এবং অপসারণ করার জন্য বিজ্ঞানীরা তথ্য বিশ্লেষণ কৌশলগুলি উন্নত করার গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছেন ।