উত্তর আমেরিকা জুড়ে কেঁচোদের আক্রমণ, পূর্বে ভয়ের কারণ না মনে হলেও আজ মহাদেশের বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি হিসাবে প্রকাশ পাচ্ছে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে একটি নতুন গবেষণা অনুসারে, অন্তত ৭০টি আগ্রাসী প্রজাতির কেঁচো উত্তর আমেরিকার মাটিতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা যে যুগে বসবাস করি সেই নৃতাত্ত্বিকযুগের ধারণা দিতে সাহায্য করে এই কেঁচো। আমরা জানি কেঁচো, সাধারণত কৃষি এবং মাটির জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। উত্তর আমেরিকায় ভিনদেশী কেঁচো প্রজাতির প্রবর্তন ঘটে ১৮০০-র শেষের দিকে যদিও উদ্দেশ্য ছিল মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করে তাদের ইতিবাচক অবদানকে কাজে লাগানো। এই প্রাণীগুলো মাটিতে বায়ুচলাচল, জল এবং পুষ্টির অনুপ্রবেশকে সহজ করে তোলে এবং তাদের খনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটিকে সমৃদ্ধ করে তোলে। কিন্তু এই গবেষণাটি তাদের এক অন্ধকার দিক তুলে ধরেছে। ভিনদেশী কেঁচো মাটির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে অন্যান্য ক্ষতিকারক উদ্ভিদ প্রজাতির বিস্তারকে সাহায্য করছে ফলত দেশীয় গাছপালা এবং বন্যপ্রাণীর উপর এক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার উত্তরের বনভূমির মাটি কেঁচোর প্রভাবে সেখানকার গাছের উপর চাপ সৃষ্টি করছে যার প্রভাব দেখা দিচ্ছে খাদ্য শৃঙ্খলে ফলত ক্ষতিকারক প্রজাতির গাছপালা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে এই ক্ষতিকারক প্রজাতির কেঁচো উত্তর আমেরিকা জুড়ে ৯৭% অধ্যয়ন করা মাটিতে পাওয়া গেছে। এই মহাদেশের কেঁচোর মোট সংখ্যার ২৩% এই ক্ষতিকারক প্রজাতি দ্বারা গঠিত ফলে এরা অন্যান্য স্থানীয় প্রজাতিদের সরিয়ে তাদের স্থান দখল করে নিয়েছে। গবেষকরা ১৮৯১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এক বিশাল তথ্য সংগ্রহ ব্যবহার করে উত্তর আমেরিকা জুড়ে এই প্রজাতির প্রবর্তনের পথ এবং বিস্তারের মানচিত্র তৈরি করেছেন। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে সামগ্রিকভাবে, আগ্রাসী প্রজাতির কেঁচো মহাদেশের ৩০৮টি কেঁচো প্রজাতির ২৩% প্রতিনিধিত্ব করে এবং ১৩টি সর্বাধিক বিস্তৃত কেঁচো প্রজাতির মধ্যে ১২টি এই আগ্রাসী প্রজাতির কেঁচো। কানাডায় এলিয়েন কেঁচোর অনুপাত দেশীয় কেঁচো থেকে তিনগুণ বেশি। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে আক্রমণাত্মক কেঁচোদের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের স্ত্রী কেঁচোরা পুরুষ কেঁচোর সাহায্য ছাড়াই সন্তান উৎপাদন করতে পারে। তাছাড়াও মহাদেশের উত্তরাঞ্চলে গলে যাওয়া পারমাফ্রস্ট আক্রমণাত্মক কেঁচোদের জন্য একেবারে নতুন আবাসস্থল সরবরাহ করছে।