গত ৩০ নভেম্বর কলকাতার ঐতিহ্যশালী রামমোহন লাইব্রেরি হল-এ অনুষ্ঠিত হল আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ১৬৬তম জন্মদিন স্মরণে একটি অনুষ্ঠান। উদ্যোক্তারা সগর্বে জানান, আচার্য জগদীশচন্দ্র স্বয়ং এক সময় ওই লাইব্রেরির সভাপতি ছিলেন। তাঁর বাড়ি ও গবেষণাগারও ওই লাইব্রেরির সামনেই। এখন সেখানে তাঁর একটি স্মৃতিমন্দির স্থাপিত হয়েছে, যেখানে তাঁর উদ্ভাবিত ও ব্যবহৃত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিগুলো রক্ষিত আছে।
অনুষ্ঠানটি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম ভাগে ছিল বসু বিজ্ঞান মন্দিরের সৌজন্যে প্রাপ্ত একটি তথ্যচিত্রে সংক্ষিপ্ত কিন্তু স্পষ্টভাবে জগদীশচন্দ্রর রেডিও-তরঙ্গ গবেষণার ধাপগুলি তুলে ধরা হল। ইতালির গিউলিএলমো মার্কোনি যে তাঁরই তৈরি “কোহিয়ারার”-এর একটি উন্নত সংস্করণ ব্যবহার করে পৃথিবীর প্রথম রেডিও বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করেছিলেন, তা বুঝিয়ে বলা হল। একটি কথা খুব জোরের সঙ্গে উঠে এল যে, আজ যতবারই আমরা মোবাইল ব্যবহার করি, ততবারই আসলে জগদীশচন্দ্রর উদ্দেশে একবার করে প্রণাম নিবেদন করি। কেননা তিনিই প্রথম ক্ষুদ্র তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ উৎপাদন করতে সমর্থ হয়েছিলেন, যা আজকের অত্যাধুনিক মোবাইল প্রযুক্তির জনক। শুধু তাই নয়, সেমি-কন্ডাক্টর বিষয়ক গবেষণাতেও তিনি ছিলেন পথিকৃৎ, যদিও সে-গবেষণা তিনি বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যাননি। স্মরণীয়, জগদীশচন্দ্র তাঁর এই যুগান্তকারী কাজটি করেছিলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের একটি ছোট্ট ল্যাবরেটরিতে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগের বিষয় ছিল উদ্ভিদ-শারীরতত্ত্বে জগদীশচন্দ্রর অবদান। ওই গবেষণা চালানোর সময় ভগিনী নিবেদিতা তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। আলোচক আশীষ লাহিড়ী দেখান, নিবেদিতা মারফত স্বামী বিবেকানন্দর অদ্বৈতবাদী দর্শনচিন্তা কীভাবে জগদীশচন্দ্রর গবেষণাকে প্রভাবিত করেছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এর ফলে জগদীশচন্দ্র কি বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিতন্ত্র থেকে কিছুটা সরে এসেছিলেন?
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়।