২০১৪-য় পাঞ্জাবের আজনালা প্রদেশে একটা খননকার্যে পাওয়া গিয়েছিল একটি প্রাচীন কুয়ো। রোমাঞ্চ বাড়িয়ে সেই প্রাচীন কুয়ো থেকে উদ্ধার হয়েছিল অনেক মানুষের মাথার খুলি! মাথার খুলি নিয়ে তৈরি হয়েছিল জোর বিতর্ক। একদল ঐতিহাসিকের মত, খুলিগুলো ভারত ভাগের সময়ের, দাঙ্গার প্রতিফলন। কিন্তু প্রত্নতাত্বিকদের একাংশের মতে, এই সমস্ত খুলির বয়স আরও বেশি। সিপাই বিদ্রোহের সময়কার। শেষপর্যন্ত, সম্প্রতি এই রহস্য ভেদ করেছেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ববিদ জে.এস শেরওয়াত। হায়দ্রাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার এন্ড মলিকুলার বায়োলজি (সিসিএমবি), লখনউয়ের বীরবল সাহানি ইনস্টিটিউট এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং প্রত্নতত্ববিদদের সঙ্গে যৌথভাবে করা তার গবেষণা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ফ্রন্টিয়ার্স ইন জেনেটিক্স-এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রফেসর শেরওয়াত ও তার সঙ্গী গবেষকরা তাঁরা সংগৃহীত স্যাম্পেলের ডিএনএ এবং আইসোটোপ বিশ্লেষণ করে জেনেছেন খুলিগুলো ১৬৫ বছরের পুরনো। রিসার্চের ফল আর ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে জানা গিয়েছে মাথাগুলো ছিল ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে ভারতীয় সিপাহীদের! সিপাহীরা ছিলেন তৎকালীন উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা আর বাংলার! ঐতিহাসিকদের মতে এই সিপাহীরা ছিলেন ২৬ নম্বর নেটিভ বেঙ্গল ইনফ্যানট্রি ব্যাটেলিয়নের সিপাহী। তথ্য অনুযায়ী, সিপাহী বিদ্রোহ শুরুর সময় তাঁরা ছিলেন, মিয়ান মীরে, মানে আজকের পাকিস্তানে। প্রাথমিক লড়াইয়ে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জিতে তারা এগোছিলেন পাঞ্জাবের দিকে। এই পথে তারা হয়ত দিল্লী পৌঁছতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজনালাতেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের হার মানতে হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দিনটা ছিল ১৮৫৭-র ১ অগস্ট। ২৮২ জন হতভাগ্য ভারতীয় সিপাহীকে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল ‘কালো কা কুঁয়া’র কালো জলে! ইংরেজদের দলিলে যে কুয়ো (রেবেল’স গ্রেভ) নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক সুরিন্দর কোচর আর গুরদ্বারা শহীদগঞ্জ ম্যানেজমেন্ট কমিটির আন্তরিক চেষ্টায় অবশেষে পরিচয় লাভ, এই হতভাগ্য অজ্ঞাতদের!