‘আণবিক আঠা’ যা স্মৃতি গড়ে ও দীর্ঘস্থায়ী করে

‘আণবিক আঠা’ যা স্মৃতি গড়ে ও দীর্ঘস্থায়ী করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ জুন, ২০২৪

স্কুলে প্রথমবার যাওয়া বা প্রথম সাইকেল চালাতে শেখা, এসবের স্মৃতি শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলেও আমাদের মনের মণিকোঠায় অক্ষত। কিন্তু কীভাবে এই স্মৃতিগুলো সারা জীবন ধরে আমরা বয়ে নিয়ে চলি? দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত, নিউরনগুলো শক্তিশালী সাইন্যাপস ও দুর্বল সাইন্যাপসের প্যাটার্ন যা নিউরাল নেটওয়ার্কগুলির সংযোগ এবং কার্যকারিতা নির্ধারণ করে, তার মাধ্যমে স্মৃতিতে তথ্য সঞ্চয় করে। কিন্তু সাইন্যাপসের অণুগুলো অস্থির, ক্রমাগত নিউরনে ঘুরে বেড়ায় যা বিভিন্ন সময়ে প্রতিস্থাপিত হয়, তাহলে স্মৃতি কীভাবে বছরের পর বছর স্থিতিশীল থাকতে পারে? আন্তর্জাতিক গবেষকরা সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে এক গবেষণায়, দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি গঠনের এক জৈবিক ব্যাখ্যা উন্মোচিত করেছেন। তার KIBRA নামে এক অণুর কথা জানিয়েছেন, যা অন্যান্য অণুর ক্ষেত্রে “আঠা” হিসাবে কাজ করে, যার ফলে স্মৃতি গঠন দৃঢ় হয়। আগে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি সংরক্ষণে অণুর ভূমিকা বোঝার জন্য একক অণুর ক্রিয়াকলাপে নজর দেওয়া হত। স্নায়ু বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও গবেষক আন্দ্রে ফেন্টন ব্যাখ্যা করেছেন, তাদের গবেষণা দেখিয়েছে অণুগুলো কীভাবে একসাথে কাজ করে চিরস্থায়ী স্মৃতি সংরক্ষণ নিশ্চিত করে।
ল্যাবরেটরিতে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা KIBRA ( কিডনি এবং মস্তিষ্কে প্রকাশিত প্রোটিন)-র ভূমিকার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রোটিনের জেনেটিক রূপ শক্তিশালী এবং দুর্বল উভয় স্মৃতিশক্তির সাথে যুক্ত। তারা KIBRA ও স্মৃতি গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যন্য অণুর মিথস্ক্রিয়ার ওপর মনোযোগ দিয়েছেন, এই ক্ষেত্রে, প্রোটিন কাইনেস মেজেটা দেখা হয়েছে। এই এনজাইমটি সাধারণ স্তন্যপায়ীর সাইন্যাপসগুলো শক্তিশালী করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অণু, তবে এটা কয়েক দিন পরে হ্রাস পায়। তাদের পরীক্ষাগুলি প্রকাশ করে যে KIBRA দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে “মিসিং লিঙ্ক”-এর কাজ করে। এটা অটলভাবে আঠা হিসেবে কাজ করে, যা শক্তিশালী সাইন্যাপসিস এবং পিকেএমজেটাতে লেগে থাকে আর দুর্বল সাইন্যাপস এড়িয়ে যায়। অপর একজন গবেষক টড স্যাক্টর বলেছেন, কীভাবে আমাদের স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে তা বুঝলে ভবিষ্যতে স্মৃতি-সম্পর্কিত সমস্যাগুলো বুঝতে ও মোকাবিলার প্রচেষ্টা করতে সহায়তা পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + seven =