গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে বিজ্ঞানের অনেকটাই বিকাশ ঘটেছিল, মূলত গবেষণা ও চর্চার পরিপ্রেক্ষিত থেকে। কিন্তু দ্বিতীয়বার দেশটা তালিবান নামক মৌলবাদীদের দখলে চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানে আবার সংকটে বিজ্ঞান! এই হতাশা দেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যেই। অনেকে দেশ ছাড়তে পেরেছেন, অনেকে পারেননি। কিন্তু হতাশা আর আতঙ্ক প্রত্যেকের মধ্যে। হামিদুল্লা ওয়েজি তেমনই একজন অভিজ্ঞ ভূতত্ববিদ। আফগানিস্তানে খনিজ দ্রব্য পেতে কোথায় কোথায় মাটি খোঁড়া পাওয়া যেতে পারে সেই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছিলেন কাবুলের পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৬ অগস্ট থেকে দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, গবেষণাকেন্দ্রের সঙ্গে কাবুলের পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওয়েজি এখনও দেশ ছাড়েননি। সম্প্রতি তাঁর বক্তব্য, ‘তালিবানরা মুখে বলছে গবেষণা চলবে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা তো সারা বিশ্ব দেখছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যে তালিবানদের আমরা দেখেছিলাম, এখনও তারা বদলায়নি।’
আতাউল্লা আমাদি কাবুলের কাতেব বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষক। তাঁরও একই হতাশা, “আর্থিক অনুদান আর ব্যক্তিস্বাধীনতার বিলোপে বিজ্ঞানের অগ্রগতির বারোটা আবার বেজে যাবে। সমস্ত অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে। আইএমএফের টাকা, আন্তর্জাতিক ফান্ডিং, ইউরোপ থেকে আসা আর্থিক অনুদান, সব বন্ধ হয়ে যাবে। আর এর একটাই ফল, সমস্ত রকমের গবেষণার সমাপ্তি!”
শাকার জাফারি। আফগানিস্তানেরই একজন পদার্থবিদ। ইংল্যান্ডের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ২০০১ সাল থেকে গবেষণা করছেন। ২০১৪-য় আফগানিস্তানে প্রথমবার সিসমিক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। যে নেটওয়ার্কে আগে থেকে ভূমিকম্প সম্পর্কে জানা যায়, ভবিষ্যৎবাণী করা যায়, প্লেট টেকটনিক্সের সাহায্য নিয়ে। সেই কর্মযজ্ঞ বিজ্ঞানীদের যে দলটা করেছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন এই জাফারি। তালিবানদের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনিও বিজ্ঞানচর্চার কোনও আশা দেখছেন না। তাঁরও মনে হচ্ছে, বিজ্ঞানচর্চার বারোটা বেজেই গেল!