আবাহাওয়া থেকে কার্বন বন্দি করার নয়া কৌশল

আবাহাওয়া থেকে কার্বন বন্দি করার নয়া কৌশল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫

বড়ো বড়ো কারখানা থেকে যে- কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) বেরিয়ে আবহাওয়াকে দূষিত করে, তাকে বন্দি করে দূর করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। এটাকে এক কথায় বলে ‘কার্বন ধরা’ (কার্বন ক্যাপচার)। বর্তমানে কার্বন ধরার জন্য চালু প্রযুক্তিগুলি অতিরিক্ত বেশি শক্তি খরচ করে , তাছাড়া তাদের কাজে লাগানো খুব সহজ নয়। কিয়ান আমিনি-র পরিচালনায় হার্ভার্ডের জন এ পলসন স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস-এর গবেষকরা এর একটা বিকল্প বার করার চেষ্টা করছেন। ‘নেচার কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ পত্রিকায় তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। মাইকেল জে আজিজ এবং ট্রেসি সাইক্‌স এই পেপারটির সহ-লেখক। তাঁরা ‘কুইনোন’ নামে জলে-দ্রাব্য এক নতুন অণুকে কাজে লাগিয়েছেন। কুইনোন একটি অত্যন্ত সুলভ ছোটো জৈব অণু। অশোধিত তেল, এবং রেউচিনি জাতীয় লতার (রুবার্ব) মধ্যে এটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এরা আবহাওয়া থেকে CO2 ধরে বার করে আনতে পারে। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, দুভাবে এরা এই কাজ করে। দুটো প্রক্রিয়া একসঙ্গে কাজ করে, কিন্তু কোন প্রক্রিয়াটা কীভাবে কার্বন ধরে সেটা এতদিন অস্পষ্ট ছিল। একটা প্রক্রিয়ায় কুইনোন দ্রবণ সরাসরি কার্বন পাকড়াও করে। কুইনোন অণুটি একটি বৈদ্যুতিক চার্জ গ্রহণ করে একটা বিজারণ (রিডাকশন) বিক্রিয়া চালু করে দেয়। এর ফলে CO2 –র প্রতি অণুটির আসক্তি জন্মায়। তখন সেটি CO2 অণুর সঙ্গে জুড়ে গিয়ে কুইনোন-CO2 যৌগ-সমাহার গঠন করে। অন্য প্রক্রিয়াটি কাজ করে ঘুরপথে। কুইনোনগুলি আহিত (চার্জড) হয়ে প্রোটন খরচ করে, যার ফলে দ্রবণটি হয়ে ওঠে ক্ষারীয়। CO2 তখন অনায়াসে সেই ক্ষারীয় দ্রবণের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করে হরেক কার্বনেট যৌগ, বাই-কার্বোনেট সহ। দুই প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনটিতে কতটুকু কার্বন ধরা পড়ে সেটা জানবার জন্য গবেষকরা দুটি পরীক্ষা করেন। প্রথমটিতে তাঁরা দুটি তড়িৎদ্বারের (ইলেকট্রোড) সাপেক্ষে কুইনোন আর তা থেকে উৎপন্ন CO2 যৌগগুলির ভোল্টেজ-স্বাক্ষরের ফারকটা পরিমাপ করেন। দ্বিতীয়টিতে তাঁরা প্রভমান (ফ্লুওরেসেন্স) আণুবীক্ষণিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে জারিত, বিজারিত এবং উৎপন্ন রাসায়নিকগুলিকে আলাদা করে অতিদ্রুত সময়কালের মধ্যে তাদের গাঢ়ত্ব পরিমাপ করেন। তাঁর দেখেন যে কুইনোন মারফত কার্বন ধরার প্রক্রিয়ায় জড়িত যৌগগুলির কতকগুলো নিজস্ব প্রভমান স্বাক্ষর-চিহ্ন আছে। ফলে কোন প্রক্রিয়াটি কতটা কার্বন ধরে তার হিসাব করা সম্ভব হয়েছে। এবার সুনির্দিষ্ট ক্রিয়াকৌশল আর রাসায়নিক প্রজাতির প্রয়োজন অনুসারে সিস্টেমগুলির নকশা বানানো সম্ভব হবে। বিভিন্ন উৎপাদন-শিল্পে এর প্রয়োগ ঘটবে। সমস্যা যে সব মিটে গেছে এমন নয়। যেমন অক্সিজেন-সংবেদনশীলতা এর প্রয়োগকে ব্যাহত করতে পারে। তবে একথা ঠিক, এর ফলে অনুসন্ধানের নতুন নতুন পথ খুলে গেল।

http://www.sciencedaily.com/releases/2025/01/250116161232.htm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 + 3 =