আমেরিকায় বিজ্ঞান বিরোধী একুশে আইন

আমেরিকায় বিজ্ঞান বিরোধী একুশে আইন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫

প্রথম বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির যে ধারাকে প্রবহমান রেখছে তা কি প্রশ্নচিহ্নের মুখে?
৪৭তম মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কর্তৃক বাস্তবায়িত আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে মার্কিন বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় বিচলিত। বিশেষ করে বিশ্বের বৃহত্তম পাবলিক বায়োমেডিকেল গবেষণা তহবিল প্রদানকারী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ(এনআইএইচ)এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ভারী উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।তার প্রশাসন হঠাৎ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর ভিতরে এবং বাইরে বিজ্ঞানীদের গবেষণা-অনুদান পর্যালোচনা, ভ্রমণ এবং প্রশিক্ষণ বাতিল করেছে। এবং ট্রাম্পের টিম – সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে বৈচিত্র্য প্রোগ্রাম এবং বৈচিত্র্য-সম্পর্কিত অনুদান সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়েবপৃষ্ঠাগুলি মুছে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নানা সভা এবং ভ্রমণ বাতিল করা হল এনআইএইচ-এর মূল সংস্থা, মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ কর্তৃক একুশে জানুয়ারী জারি করা বহিরাগত যোগাযোগের বাধ্যতামূলক স্থগিতাদেশের প্রত্যক্ষ ফলাফল।

এনআইএইচ তহবিলের কুড়ি বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন বিকাশমূলক জীববিজ্ঞানী ক্যারোল লাবোন এই স্থগিতাদেশকে “বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের জন্য ধ্বংসাত্মক” বলে অভিহিত করেছেন, বিশেষ করে যারা গবেষণাকে প্রাথমিক পেশা বা বৃত্তি হিসেবে নির্বাচন করেছেন তাদের জন্য। এনআইএইচ এবং অনুদান-পর্যালোচনা প্যানেলগুলিকে জনসাধারণের উপস্থিতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল কিনা? এবং কেন সেগুলি বাতিল করা হয়েছিল, এবিষয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি এইচএইচএসের মুখপাত্ররা। ক্যারোল লাবন মনে করেছেন তহবিল অনিশ্চিত বা বিলম্বিত হলে তাদের নানা ভাবে ছাঁটাই করা হতে পারে। অন্য কোথাও চাকরি খুজতে তারা বাধ্য হবে। যার ফলস্বরূপ গবেষণা ক্ষেত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হারিয়ে যেতে পারে এবং নিয়োগ, পদোন্নতি এবং মেয়াদের সিদ্ধান্তগুলিকে নানা সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হবে। পোর্টল্যান্ডের ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির জরুরী-মেডিসিন চিকিৎসক এসথার চু, বাইশে জানুয়ারী ব্লুস্কিতে লিখেছেন যে একটি অধ্যয়ন বিভাগে তার অংশগ্রহণ করার কথা ছিল যা এই ঘটনার ফলে এই সপ্তাহে বাতিল করা হয়েছে।যোগাযোগ স্থগিত রাখার ক্ষেত্রে এনআইএইচ-এর সহযোগী সংস্থাগুলিও অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। আজ, ‘সিডিসি’ রোগ পরিসংখ্যান এবং গবেষণার উপর তার সাপ্তাহিক বিবেচনা, যাকে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর সাপ্তাহিক রিপোের্ট বলা হয়, তা প্রকাশিত হয়নি , যার উপর বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এবং স্বাস্থ্য অনুশীলনকারীরা নির্ভর করেন – ষাট বছরের ইতিহাসে যা প্রথমবার ঘটল। ট্রাম্প প্রশাসন এনআইএইচ ওয়েবসাইট থেকে কাঠামোগত বর্ণবাদ এবং বৈচিত্র্য সম্পর্কিত সমস্ত উপাদানও মুছে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও বৈচিত্র্য, ন্যায় সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে উদ্যোগী ইউএনআইটিই নামক একটি সংস্থার উপকরণগুলিও হারিয়ে গেছে, যার লক্ষ্য ছিল বায়োমেডিকেল কর্মীদের মধ্যে কাঠামোগত বর্ণবাদ মোকাবেলা করা। লাবোন বলেন এই সম্প্রদায়টি বৈজ্ঞানিক কর্মীদের বৈচিত্র্যময় করার জন্য অনবরত চেষ্টা করেছে যার কেবলমাত্র সামান্য অগ্রগতি হয়েছে এবং এখন এটিকে কেবল একটি কলমের খোঁচায় মুছে ফেলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − five =