
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড হিউজ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের জ্যানেলিয়া রিসার্চ ক্যাম্পাসের পরিচালক মেং ওয়াং ও তার দল বহুদিন ধরেই আয়ু বাড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। গোলকৃমি-এর লাইসোজোমে ( কোষের একটি অঙ্গাণু) একটি নির্দিষ্ট জৈব অনুঘটক অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি করালে, কৃমির জীবনকাল প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তবে গবেষকদের জন্য সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়টি ছিল এর পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেত্রেও প্রভাবটি দেখতে পাওয়া। অথচ সেগুলি এই জিনগত পরিবর্তন বহন করেনি। গবেষকরা এই দীর্ঘজীবী কৃমির সাথে, সাধারণ কৃমির সংকরায়ণ করেন। সাধারণত কোনো জিনগত পরিবর্তন মুছে ফেলতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা গেল, নতুন প্রজন্ম সাধারণ কৃমির তুলনায় দীর্ঘজীবী! এমনকি চতুর্থ প্রজন্ম পর্যন্ত এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রশ্ন হল, কীভাবে এই ‘দীর্ঘজীবন বার্তা’ প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে? কীভাবে লাইসোজোমের পরিবর্তনসমূহ শরীরের কোষ থেকে পৌঁছে যাচ্ছে প্রজনন কোষে? এই প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকা হিস্টোন নামক প্রোটিনের। এটি ডিএনএ-কে গুছিয়ে রাখতে ও জিন প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রজনন কোষে এই হিস্টোন এক নির্দিষ্ট ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কৃমির এপিজেনোমে (জিন প্রকাশ নিয়ন্ত্রণকারী রাসায়নিক চিহ্নের সমষ্টি) পরিবর্তন ঘটায়। তার ফলে এই বার্তা ডিএনএ পরিবর্তন না করেই পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছে যায়। গবেষকরা আরও দেখেন, দীর্ঘজীবী কৃমিদের দেহে একটি নির্দিষ্ট হিস্টোন সংশোধন অনেক বেশি পরিমাণে হয়েছে। তাঁরা জানতে চান, এই পরিবর্তনের সাথে লাইসোজোমের কী সম্পর্ক? নানারকম জিনতাত্ত্বিক সরঞ্জাম ও ইমেজিং ব্যবহার করে তাঁরা দেখেন, লাইসোজোমের বিপাকীয় পরিবর্তনের দরুন কোষে একধরনের সংকেত প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা একটি বিশেষ প্রকার হিস্টোন উৎপাদনে উদ্দীপনা জোগায়। এই হিস্টোন দেহকোষ থেকে প্রজনন কোষে পৌঁছে যায় এমন সব প্রোটিনের মাধ্যমে, যেগুলো ডিম্বাণু গঠনে পুষ্টি সরবরাহ করে। প্রজনন কোষে পৌঁছে হিস্টোনটি আবার সংশোধিত হয়। এই পরিবর্তনের বার্তাই নতুন প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। এই পথটি উপবাসকালেও সক্রিয় থাকে, যা লাইসোজোমের বিপাকে পরিবর্তন আনে এবং সেখান থেকে বার্তা পৌঁছে যায় প্রজনন কোষে। এ থেকে বোঝা যায়, পরিবেশগত পরিবর্তন যেমন খাদ্যাভ্যাস বা চাপ, এগুলির প্রভাবও পরবর্তী প্রজন্মে যেতে পারে। এই গবেষণা শুধু আয়ুষ্কাল নয়, জিন সংক্রান্ত উত্তরাধিকারের বিস্তৃত প্রভাব নিয়ে আলোচনার পথ খুলে দেয়। এতদিন লাইসোজোমকে কোষের ‘রিসাইক্লিং সেন্টার’ বলা হতো। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, এটি একধরনের সংকেত কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে, যা কোষের নানা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে এবং এমনকি উত্তরাধিকারকেও প্রভাবিত করে।
মেং ওয়াং বলেন, “আমরা দেখালাম, দেহকোষ ও প্রজনন কোষের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে পারে হিস্টোন এবং এটি স্মরণযোগ্য জিন তথ্য বহন করতে পারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।” এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, একজন পিতামাতার অপুষ্টি সন্তানদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। নতুন গবেষণার পিছনের কোষ ঘটিত এবং জিন ঘটিত কারণগুলিকে ব্যাখ্যা করার পথ খুলে যাচ্ছে।
সূত্র: “Lysosomes signal through the epigenome to regulate longevity across generations” by Qinghao Zhang, Weiwei Dang and Meng C. Wang, 25 September 2025, Science.