আলহ্যামরার সোনার প্রাসাদে বেগুনি ছোপ কেন?

আলহ্যামরার সোনার প্রাসাদে বেগুনি ছোপ কেন?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মধ্যযুগে ইসলামিক স্থাপত্য ঠিক কোন উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তার উৎকৃষ্ট নিদর্শনের মধ্যে একটা স্পেনের আলহ্যামরা প্রাসাদ। কিন্তু দিনে দিনে প্রাসাদের সোনার দেওয়ালে বেগুনি দাগ তৈরি হতে শুরু করে। ১৯৯৩ সালে প্রথম এই বিষয়টা খুঁজে পেয়েছিলেন গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ ক্যারোলিনা কার্ডেল।

স্পেনের আলহ্যামরা অট্টালিকা একটা পাহাড়ের উপর অবস্থিত। সিলিং সোনা দিয়ে বাঁধানো, গুহার স্ট্যালাকটাইটের ধাঁচে প্রাসাদের ছাদ বানিয়েছিলেন মধ্যযুগের শিল্পীরা। উনিশ শতকের গোড়াতে স্থানীয় প্রশাসন সংরক্ষণের তাগিদে সোনার পাতগুলোকে জিপসাম দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল। প্লাস্টার করার সময় জিপসাম নামের এই সাদা খনিজ কাজে লাগে।

শ্রীমতী কার্ডেল যখন প্রথম এই ক্ষয়ের নমুনা দেখতে পান, তখন ওনাদের কাছে বেগুনি দাগগুলোর ব্যাখ্যা ছিল না। তারপর গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয় দু ধরণের ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ আমদানি করে। তাতেই ধীরে ধীরে প্রাসাদের রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানা গিয়েছে।

প্রফেসর কার্ডেলের সহযোগী ছিলেন কার্মেন নাভারেট। নাভারেট আলহ্যামরা পুনরুদ্ধার প্রকল্পের কর্ণধার ছিলেন, যদিও কাজ শেষ হওয়ার আগেই উনি মারা যান। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের বিশেষজ্ঞ ইসাবেল গ্যেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন প্রাসাদের ঝালাইয়ের স্তর, জিপসাম আর বেগুনি ছোপ। ৭০ ন্যানোমিটার ব্যাসের একেকটা স্বর্ণগোলকের ভেতর ঢুকে আছে জিপসাম কণা। আর ঐ আকারের আণবিক কণা থেকে বেগুনি রঙ বের হওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়।

খাঁটি সোনা জারিত না হলেও সোনা-রুপোর মিশ্র ধাতু কিন্তু সহজেই ক্ষয় হতে পারে। ঝালাইয়ের সময় খুঁত কিছু অবশ্যই ছিল, ফলে বাতাসের স্বাভাবিক আর্দ্রতায় নষ্ট হয়েছে আলহ্যামরার সোনায় মোড়া এই স্থাপত্য। এমনই জানিয়েছেন কার্ডেল আর ইসাবেল।

শিকাগো আর্ট ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ফ্রান্সেস্কা কাসাদিও যদিও উচ্ছ্বসিত এই গবেষণা নিয়ে। ওনার মতে এটা যুগান্তকারী খোঁজ।