আলো মনকেও প্রভাবিত করে

আলো মনকেও প্রভাবিত করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ নভেম্বর, ২০২৪

ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময়েরও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আমাদের মেজাজেরও কী পরিবর্তন দেখা যায়? পূর্ববর্তী গবেষণা প্রমাণ করেছে যে আলো আমাদের সুস্থতার ক্ষেত্রে একটি ভূমিকা পালন করে। শীতের শেষে বসন্ত এলে আমাদের মধ্যে অনেকেই বেশি ইতিবাচক বোধ করি। কিন্তু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে আলোর পরিবর্তন বা রাতে উজ্জ্বল আলো একটি সমস্যার কারণ হতে পারে। আমরা জানি যে আলো, মস্তিষ্ক এবং আমাদের শরীরের ছন্দ নিয়ন্ত্রণের ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান ক্লকে “টাইমিং সিগন্যাল” পাঠায়। এই ঘড়িটি আমাদের প্রতিদিনের শরীরের ছন্দ সমন্বয় করে।”ক্লক জিন” সার্কাডিয়ান ছন্দকেও নিয়ন্ত্রণ করে। চব্বিশ ঘন্টার আলো-অন্ধকার চক্রের সময় এই জিনগুলো অন্যান্য অনেক জিন চালু এবং বন্ধ হওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ করে। এখন প্রশ্ন হল কীভাবে এই সব আমাদের মেজাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত?
অনেক সময় আমাদের শরীরের ছন্দ ব্যহত হলে বা তার কাজ করতে সমস্যা হলে অথবা যদি কেউ নিয়মিতভাবে রাতে উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শে আসে তবে সার্কাডিয়ান ছন্দ ব্যাহত হতে পারে। ফলে, এটি কিছু মানসিক ব্যাধির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং অ্যাটিপিকাল ডিপ্রেশন অর্থাৎ এমন এক ধরনের বিষণ্ণতা যার ফলে ব্যক্তিটি অতিরিক্ত ঘুমায় এবং তার শক্তি এবং বিপাকের সমস্যা ঘটে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে আলো মস্তিষ্কের সার্কিটগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাণীদের নিয়ে পরীক্ষায় দেখা গেছে আলো মেজাজ নিয়ন্ত্রণকারী মস্তিষ্কের কিছু সার্কিটকেও প্রভাবিত করতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আলোর পরিবর্তন ঘটে আর তা আমাদের মেজাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে। শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য ও আলোর মাত্রা কমে যায় ফলে আমাদের অনেকের মেজাজ খারাপ থাকে এবং ক্লান্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বসন্ত এবং তারপর গ্রীষ্মের আগমনে এই লক্ষণগুলো চলে যায়। একে বলা হয় “সিজন্যালিটি” আর যখন লক্ষণ আরও গুরুতর হয় তাকে বলে “সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার”। গরমের সময় যখন আলোর সময়কাল ও পরিমাণ দুটোই বেড়ে যায় তখন মানসিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটে। কিছু লোকের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে যা খুবই ইতিবাচক। গবেষণা জানিয়েছে সিজন্যালিটির পিছনে রয়েছে জিনের কাজ। বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে শীতকালে ছোটো দিনের ফলে তাদের মেজাজ বিষণ্ণ হয়ে যায়। ঋতু পরিবর্তনের সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের যখন ওঠানামা ঘটে তখন মস্তিষ্কে কী ঘটছে তার একটি ব্যাখ্যা দিতে বিজ্ঞানীরা নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের কথা জানান। সেরোটোনিন মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শরীরে সেরোটনিনের মাত্রা কম থাকলে মন বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। শীতের সময় এই ঘটনাই ঘটে। ডোপামিন এমন এক নিউরোট্রান্সমিটার যা পুরষ্কার, অনুপ্রেরণার সঙ্গে সম্পর্কিত। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে ডোপামিনের মাত্রাও পরিবর্তিত হতে পারে। তবে গবেষকদের কাছে সিজন্যালিটি অত্যন্ত নতুন একটি ক্ষেত্র এবং মস্তিষ্কে কী ঘটছে তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + fifteen =