“ঈনিস”-এর হারানো লিপি পাঠ

“ঈনিস”-এর হারানো লিপি পাঠ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ আগষ্ট, ২০২৫

গুগল ডিপমাইন্ড সম্প্রতি একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সহকারী উপকরণ প্রকাশ করেছে, যার নাম ঈনিস। এটি বিশেষ করে ইতিহাসবিদদের জন্য একটি অতি অসাধারণ সহায়ক হবে বলে মনে হয় । এর মাধ্যমে প্রাচীন রোমান শিলালিপি ও লাতিন ভাষার খণ্ডিত বা অদৃশ্য অংশগুলো পুনর্গঠন করা সম্ভব হচ্ছে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত যন্ত্রটি হারিয়ে যাওয়া শব্দ অনুমান করতে পারে প্রাসঙ্গিকতা ও ভাষাগত সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে।
ঈনিস তৈরি হয়েছে গুগলের পূর্ববর্তী প্রকল্প ইথাকার ভিত্তিতে। ইথাকা গ্রীক শিলালিপিগুলির ব্যাখ্যায় সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
এই যন্ত্রটির নাম রোমান পুরাণের বীর ঈনিস-এর নামে রাখা হয়েছে, যিনি ট্রয় যুদ্ধের সময় নিজের শহর রক্ষা করেছিলেন। যন্ত্রটি তৈরি হয়েছে ১,৭৬,০০০-এরও বেশি লাতিন লিপির উপাত্ত সম্ভার ব্যবহার করে। সেগুলি সংকলন করা হয়েছে এপিগ্রাফিক ডেটাবেস রোমা, এপিগ্রাফিক ডেটাবেস হাইডেলবার্গ এবং এপিগ্রাফিক-ডেটেনব্যাঙ্ক ক্লাউস-স্লাবি-এর মতো বিশ্ববিখ্যাত সংরক্ষণাগার থেকে।

প্রাচীন শিলালিপি, ইতিহাস জানার গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলেও, সময়ের ক্ষয়ক্ষতিতে অনেক লিপিই আজ অসম্পূর্ণ বা দুর্বোধ্য হয়ে পড়েছে। ঈনিস এই সমস্যার সমাধানে উল্লেখযোগ্য সহায়তা করছে। এটি খণ্ড খণ্ড লেখার সঙ্গে মিল রেখে সমসাময়িক লেখাগুলোর সমতুল্য লেখাগুলোকে বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য শব্দ বা তারিখ নির্ধারণ করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যদি কোনো লিপিতে সর্বোচ্চ ১০টি অক্ষর অনুপস্থিত থাকে, তাহলে ঈনিস তা ৭৩% নির্ভুলতায় পূরণ করতে পারে। যদি ফাঁকা অংশের দৈর্ঘ্য জানা না থাকে, তখন সঠিক হওয়ার হার হয় ৫৮%। এটি রোম সাম্রাজ্যের ৬২টি প্রদেশের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট লিপির উৎস চিহ্নিত করতে পারে ৭২% নির্ভুলতায় এবং লেখার সময়কাল অনুমান করতে পারে গড়ে ১৩ বছরের পার্থক্যের মধ্যে।
ঈনিস-এর কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য এটির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়েছে বিখ্যাত রোমান লিপি “Res Gestae Divi Augusti”, যা সম্রাট অগাস্টাসের আত্মজীবনীমূলক রচনা। এই লেখার নির্দিষ্ট সময় নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক থাকলেও, ঈনিস দুটি সম্ভাব্য সময়সীমা (১০–২০ খ্রিষ্টাব্দ এবং খ্রিষ্টপূর্ব ১০–১) চিহ্নিত করেছে, যা বিদ্যমান গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ মেরি বিয়ার্ড বলেন, “এটি ইতিহাস গবেষণার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।” তবে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক জোনাথন প্র্যাগ সতর্ক করে বলেন, “এই টুলটি ব্যবহারে বিচারশীল দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি।”

সূত্র: Contextualizing ancient texts with generative neural networks by Yannis Assael, Thea Sommerschield et, al ; Nature ; (23July, 2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 4 =