উষ্ণতার কবলে গলদা চিংড়ি

উষ্ণতার কবলে গলদা চিংড়ি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

পৃথিবীর মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলির মধ্যে মেইন উপসাগর দ্রুততম হারে গরম হচ্ছে। এ বাস্তবতা নিছক একটি তথ্য নয়। এটি শীতল জলজ প্রাণতন্ত্রের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। বিশেষভাবে সামুদ্রিক চিংড়ির ভবিষ্যত প্রশ্নের সামনে চলে আসছে। রপ্তানিমুখী অর্থনীতিতে সামুদ্রিক চিংড়ি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেইন ও ম্যাসাচুসেটস উপকূলের মানুষদের জন্য এটি আয় ও কৃষ্টিগত পরিচয়েরও অংশ। যদি সামুদ্রিক চিংড়ির প্রজননের উপর এর প্রভাব পড়ে, তাহলে সম্পূর্ন অর্থনীতি ও জনজীবনে ধাক্কা আসবে। এই বিষয়ে, উইলিয়াম ও মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাটেন স্কুল ও ভার্জিনিয়া ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের (VIMS) বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। তারা ২০৬০ সালের সম্ভাব্য মহাসাগরীয় অবস্থা নিয়ে পরীক্ষা চালান। সেখানে মেইনের উপকূল থেকে সংগৃহীত ডিম্ববতী সামুদ্রিক চিংড়িকে বিভিন্ন তাপমাত্রায় অম্ল সংমিশ্রণে ট্যাংকে রাখা হয়। পরীক্ষাটি পাঁচ মাস ধরে চলে, যাতে এগুলির বিকাশের বিভিন্ন ধাপ পর্যবেক্ষণ করা যায়। দেখা যায়, অম্লতা একা একেবারেই ডিমের প্রক্রিয়াকে তেমনভাবে ব্যাহত করে না। চিংড়ির ডিমগুলি প্রাকৃতিকভাবে প্রায়শই নদী-উপভূমি ও উপকূলীয় অঞ্চলে অম্ল ও ক্ষারকের পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়, ফলে তারা কিছুটা এই বিষয়টা মানিয়ে নিতে সক্ষম। এছাড়া, চিংড়ির উৎসেচক এবং শারীরবৃত্তীয় ব্যবস্থা ডিমকে অম্ল-ক্ষারক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু উষ্ণ জল একেবারেই অন্যরকম প্রভাব ফেলে। উত্তপ্ত জল ডিম ও ভ্রূণের অবস্থাকে চাপে ফেলে। হৃদ্‌স্পন্দন বৃদ্ধি পায়, অক্সিজেন ব্যবহারের হার বাড়ে, উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা বাড়ে, এবং সর্বোপরি, জন্মের পর লার্ভা ছোট আকারের হয়। একই সময়ে, বিক্ষিপ্ত পুষ্টি ধীরে ধীরে খরচ হয়। অর্থাৎ উষ্ণতার দ্রুত বিকাশ ঘটালে শারীরিক আকার ছোট হওয়া একটি সাধারণ জৈবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। গ্রীষ্মকালে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যখন সামুদ্রিক তাপমাত্রা আরও ঘনঘন বাড়ে। তখন এই ক্ষতিকর প্রভাব আরও প্রবল হয়। গবেষকরা দেখেন, সাধারণ পরিবেশে রাখা চিংড়ি বেশি সময় ধরে বেশি সংখ্যক লার্ভা উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু উষ্ণ ট্যাংকে রাখা গলদা চিংড়ি কম সময় ধরে, কম সংখ্যক ও ক্ষুদ্রতর লার্ভা উৎপাদন করে। অর্থাৎ অম্লতা পরিবর্তন চিংড়িদের আকারে পরিবর্তন ঘটায়নি। তাপমাত্রাই গলদা চিংড়ির প্রজনন প্রক্রিয়ার প্রধান বিঘ্ন। চিংড়ি জগতে লার্ভার বেঁচে থাকার হার এমনিতেই অনেক কম। তার ওপর যদি উষ্ণতা এই হারকে আরও কমিয়ে দেয়, তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম সংকটে পড়বে। দক্ষিণ নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলের সামুদ্রিক মৎস্যশিল্প ইতিমধ্যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ভেঙে পড়েছে। উত্তর দিকেও এমন পতন ঘটার সম্ভাবনা আর উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গবেষকরা পরবর্তী পর্যায়ে জানার চেষ্টা করবেন যে অম্লতা সহনশীলতা, জিনবাহিত হতে পারে কি না। উপকূল দূরবর্তী পরিবেশ কিভাবে ভ্রূণ বিকাশকে প্রভাবিত করে সেটাও তাঁদের গবেষণার বিষয় হবে।

সূত্র: Effects of multiple stressors on embryos and emerging larvae of the American lobster; Mar Ecol Prog Ser 770:45-61 (2025)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × four =