এক ছত্রাকের মাংশাসী প্রাণীতে রূপান্তর

এক ছত্রাকের মাংশাসী প্রাণীতে রূপান্তর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৬ নভেম্বর, ২০২৩

সাধারণ, নানা জায়গায় পাওয়া যায় এমন ছত্রাক, হয়তো এই মুহুর্তে আমাদের আশপাশে মাঠে ঘাটে মাটিতেই লুকিয়ে আছে, যখন খুব ক্ষুধার্ত হয়ে উঠবে তখন একটি শক্তিশালী শিকারীতে রূপান্তরিত হবে। ১৯৮০ সাল থেকে বিজ্ঞানীরা আর্থ্রোবোট্রিস অলিগোস্পোরার শিকারের ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন, তবে তারা এখনও ঠিক কীভাবে এই শান্তিপূর্ণ ছত্রাকটি কীটের জন্য এক খারাপ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
তাইপেইয়ের একাডেমিয়া সিনিকার আণবিক জীববিজ্ঞানী হাং-চে লিনের নেতৃত্বে তাইওয়ান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা দল কিছু কৌশল দেখেছেন যা দিয়ে ছত্রাক তার শিকারকে আটকে রাখে আর গ্রাস করে। সাধারণত, এ. অলিগোস্পোরা মৃত জৈব পদার্থের উপর বেঁচে থাকে। কিন্তু নাইট্রোজেন সরবরাহ যখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়, তখন নিজে বেঁচে থাকার জন্য এই ছত্রাকটি প্রয়োজনে শিকারকে আটকে রেখে মেরে ফেলতে পারে।
ছত্রাকের প্রজাতির উপর নির্ভর করে আঠালো জাল, কলাম, নব, নন-কনস্ট্রিক্টিং এবং কনস্ট্রিকটিং রিং সহ বিভিন্ন ফাঁদ ধরার ডিভাইস তৈরি হয়। ছত্রাকের শিকারী মোড শুধুমাত্র তখনই সম্পূর্ণ সক্রিয় হয় যখন ছত্রাক তার আশেপাশে রাউন্ডওয়ার্মের উপস্থিতি বুঝতে পারে। পূর্বের গবেষণা জানিয়েছিল এ। অলিগোস্পোরার -র কীট ফেরোমোন ‘ঘ্রাণ’ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এই নতুন গবেষণায় গবেষকরা এর আণবিক উন্মত্ততা অনুসরণ করে দেখেছেন যে একবার ছত্রাক তার শিকার সনাক্ত করলে , ডিএনএ প্রতিলিপি এবং রাইবোসোম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা এই ক্ষেত্রে, ছত্রাকের শিকারের প্রস্তুতির জন্য গবেষণা এবং সংগ্রহ সরঞ্জাম।
পরবর্তী পর্যায়ে, গবেষকরা কৃমি ফাঁদ তৈরি এবং পরিচালনার সাথে জড়িত জিনের কার্যকলাপের বৃদ্ধি দেখেছেন। তারা ফাঁদের পৃষ্ঠে একটি নতুন শ্রেণির প্রোটিন সনাক্ত করেছেন যেটির নাম তারা দিয়েছেন ফাঁদ সমৃদ্ধ প্রোটিন (TEP), যা নেমাটোডের ফাঁদ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই পর্যায়ের সিনট্যাক্সিনের সাথে জড়িত আরেকটি পরিচিত প্রোটিন, ‘কৃমির আঠা’ পরিবহনের সাথে জড়িত, এটি এক ধরণের প্রাকৃতিক ‘আঠা’ যা ফাঁদ থেকে বেরোয়, আর শিকারকে মুক্ত হওয়ার জন্য সহজে নাড়াচাড়া করতে দেয় না। একবার ছত্রাক তার শিকারকে আটকে ফেললে, তা কৃমির শরীরে প্রবেশ করে এবং হাইফি নামক ফিলামেন্ট ব্যবহার করে কৃমিকে হজম করে। চিবিয়ে খাওয়ার পরিবর্তে, এই হাইফি ফিলামেন্টগুলি কৃমির ভিতরে ভরে যায়, এবং প্রয়োজন অনু্যায়ী পুষ্টি শোষণ করতে থাকে। এই পর্যায়ে, গবেষকরা প্রোটিয়েজ এনজাইমের জন্য এনকোড করা জিনের কার্যকলাপ বৃদ্ধি দেখেছেন, এই এনজাইম হজমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন, তাদের বিস্তৃত ট্রান্সক্রিপ্টমিক্স এবং বিশ্লেষণগুলি ফাঁদের বিকাশ এবং কার্যকারিতায় ডিএনএ প্রতিলিপি, ট্রান্সলেশন এবং নিঃসরণ বৃদ্ধির ভূমিকাকে হাইলাইট করেছে। এই ফলাফল ছত্রাকের মাংসভোজী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মূল প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করেছে। গবেষণাটি পি এল ও এস বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।