সময়বিধি মেনে আগাম প্রতিষেধক প্রয়োগের কাজ ঠিকঠাক হলে অনেক রোগেরই আশঙ্কা রুখে দেওয়া যায়। মারাত্মক লিভার ভাইরাসের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে সুরক্ষা প্রদান করে আসা হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন হল সবচেয়ে ফলপ্রসূ টিকাকরণ। কিন্তু প্রায় ১০% ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি কাজ করে না। ২০২০ সালে, সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটির সিস্টেম বায়োলজিস্ট অ্যামি হুই-ই লি এবং তার সহকর্মীরা দেখার চেষ্টা শুরু করেন যে কোন কোন ব্যক্তি এই টিকাকরণ থেকে উপকৃত হবে। বিজ্ঞানীরা দেখেন যে প্রাপকদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কিত কিছু তথ্য যেমন নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিনের প্রাচুর্য এবং কয়েকটি জিনের কার্যকলাপের ধরন নির্দিষ্ট করে যে তারা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে সক্ষম হবে কিনা। যদিও তিনি এবং তার সহকর্মীরা শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু রোগীর কাছ থেকে পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তবে এই বছরের শুরুতে একটি প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে এই জাতীয় তথ্য সংগ্রহ করবে। হিউম্যান ইমিউনোম প্রজেক্ট (HIP) নামে পরিচিত এই প্রচেষ্টা রক্ত এবং কলার নমুনায় হাজার হাজার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করবে। ফলাফলটি সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক বিস্তৃত ইমিউনোলজিকাল ডাটাবেস তৈরি করতে সাহায্য করবে। এর ফলে মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার যে ভিন্নতা রয়েছে এবং কীভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভ্যাকসিন এবং ওষুধের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং রোগকে প্রভাবিত করে তা পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করবে।
আমাদের শরীরে ইমিউন কোশের বিভিন্ন ভূমিকা রয়েছে এবং তাদের তালিকাভুক্ত করা গবেষকদের ইমিউন সিস্টেমের স্বাস্থ্যের একটি ধারণা করতে সাহায্য করতে পারে। কার্ডিওলজির ক্ষেত্রে, একটি লিপিড প্যানেল রোগীর হার্ট ও রক্ত সংবহন তন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে অনেক কিছু প্রকাশ করে কিন্তু ইমিউনোলজির ক্ষেত্রে সাধারণ পরিমাপের কোনো তুলনামূলক সেট নেই যা একজন ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেমের অবস্থা নির্দেশ করে। অবশ্য কিছু তথ্য মোটামুটি একটা ধারণা প্রদান করতে পারে যেমন নিউট্রোফিলের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে রোগীদের সংক্রমণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই ধরনের তথ্য সীমিত। HIP-এর লক্ষ্য হল পরিমাপের একটি অভিন্ন গ্রুপ নিয়ে আসা যা একটি লিপিড প্যানেলের মতো, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। যদিও HIP ২০২৭ সালে সারা বিশ্বে এই তথ্য সংগ্রহের পর্যায়টি শুরু করতে চায়, তবে প্রচেষ্টার প্রথম পর্যায় যা এই বছর চালু হবে, কম পরিসরে এবং সম্ভবত ৭ থেকে ১০টি ক্লিনিকাল গবেষণা কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত করবে। প্রতিটি সাইটে, প্রকল্পটি প্রায় ৫০০ জনকে অধ্যয়ন করবে, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে ও পরিমাপ করবে যেমন ইমিউন কোশের প্রাচুর্য, জিনের কার্যকলাপ, বিপাকীয় অণুর ঘনত্ব এবং ডিএনএ সিকোয়েন্স। এই সব তথ্য থেকে তারপরে কয়েকটি ভেরিয়েবল নির্বাচন করা হবে যার সাহায্যে জানা যাবে যে ইমিউন সিস্টেম কীভাবে কাজ করছে। তারা একটি ইমিউন মনিটরিং কিটের ভিত্তিও প্রদান করবে, যা প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশের সমস্ত সাইট ব্যবহার করবে। সব শেষে, HIP প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ইমিউন পরিমাপ সংক্রান্ত তথ্য তৈরি করবে, যা একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেসের মাধ্যমে সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ হবে। এই তথ্য সংগ্রহ এবং অন্যান্য তথ্য যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বংশ, অর্থনৈতিক অবস্থা, বয়স এবং অন্যান্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে, HIP একটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক AI মডেল তৈরি করবে যা পূর্বাভাস দেবে কীভাবে একটি ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট ওষুধ বা প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। মডেলটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে নতুন চিকিত্সা পদ্ধতি এবং ওষুধের প্রতিক্রিয়া এড়াতে সহায়তা করতে পারে। জনসংখ্যার স্বাস্থ্য এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দুর্বলতা সম্পর্কে আরও বিশদ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, মডেলটি যেকোনো দেশ তাদের জনসংখ্যার জন্য কোন ওষুধ প্রয়োজন এবং উপযুক্ত তা আরও ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে।