ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া

ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ মার্চ, ২০২৫

ও সি ডি হল এক রকমের মনের অসুখ, যাতে একই ধরণের অবাঞ্ছিত ভাবনা আর ভয় মনের মধ্যে ক্রমাগত ঘুরপাক খায়। এর ফলে একই আ চ র ণ বার বার করার অদম্য তাড়না দেখা দেয়। এইসব বদ্ধমূল ধারণা আর অদম্য আচরণ রোগীর স্বাভাবিক জীবন যাপনকে ব্যাহত করে। ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ফলপ্রদ চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও, ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত আর পাঁচ জন স্বাভাবিক স্নায়ুক্রিয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের তুলনায় জীবনযাত্রার নিম্নমান ভোগ করেন, যার মধ্যে শিক্ষা ও আর্থিক স্থিতিশীলতার বাধাও রয়েছে। কারোলিনা লেম্পার্টের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া এই সমস্যাগুলিতে ভূমিকা রাখে কিনা তা পরীক্ষা করেছেন । বিশেষত ডিলে ডিসকাউন্টিং (তাৎক্ষণিক পুরস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া) এবং রিস্ক টলারেন্স (অনিশ্চিত ফলাফলের উপর বাজি ধরার ইচ্ছা) , এই দুই প্রসঙ্গে।
গবেষণায় ব্রাজিল, ভারত, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৬৮ জন ওসিডি আক্রান্ত এবং ২৫৬ জন সুস্থ ব্যক্তি অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা ৫১টি ট্রায়ালে ডিলে ডিসকাউন্টিং পরিমাপ করেন, যেখানে তাদের ছোট অঙ্কের তাৎক্ষণিক পুরস্কার বা বড় অঙ্কের বিলম্বিত পুরস্কার (যেমন, এখন ১০ ডলার বা ১০০ দিন পরে ২৫ ডলার ) বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ওসিডি এবং নিয়ন্ত্রিত গ্রুপের মধ্যে ডিলে ডিসকাউন্টিংয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য নেই, যদিও উদ্বেগসহ ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিক পুরস্কারের প্রতি বেশি ঝোঁক দেখান।
এরপর, ৬০টি ট্রায়ালে ঝুঁকি এড়ানো (রিস্ক এভারশন) পরিমাপ করা হয়। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা নিশ্চিত কিন্তু ছোট অঙ্ক বা বড় কিন্ত অনিশ্চিত অঙ্কের জন্য বাজি রাখার সিদ্ধান্ত নেন (যেমন, ১ ডলার নিশ্চিত বা ৫০% সম্ভাবনায় ১০ ডলার )। এখানেও ওসিডি এবং নিয়ন্ত্রিত গ্রুপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাওয়া যায়নি, এমনকি উদ্বেগযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও নয়। এই ফলাফল পূর্বের গবেষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তবে এটি আরও ব্যাপক এবং বৈচিত্র্যময় নমুনা নিয়ে পরিচালিত হয়েছিল।
লেম্পার্ট উল্লেখ করেছেন যে এই ফলাফলগুলি এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে যে বেশিরভাগ মানসিক রোগে উচ্চ মাত্রার ডিলে ডিসকাউন্টিং দেখা যায়। বরং, এটি নির্দিষ্ট কিছু অবস্থার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যা রোগ নির্ণয় এবং ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে সাহায্য করতে পারে। গবেষণাটি এই ইঙ্গিত দেয় যে ডিলে ডিসকাউন্টিং এবং রিস্ক টলারেন্স ছাড়াও অন্যান্য বোধবুদ্ধিগত প্রক্রিয়া ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে বাধাগুলিকে ব্যাখ্যা করতে পারে।
সর্বোপরি, এই গবেষণা থেকে বোঝা যায় যে ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও গভীরভাবে বুঝতে হলে অন্যান্য বোধবুদ্ধিগত প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলির অনুধাবন ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে।

সূত্র: https://www.sciencedaily.com/releases/2025/01/250124151121.htm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 4 =