ওস্তাদ খাদ্য যোগানদার বোলতা

ওস্তাদ খাদ্য যোগানদার বোলতা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ মে, ২০২৫

বোলতারা তাদের সন্তানদের খাওয়ানোর ব্যাপারে আশ্চর্যজনক স্মৃতিশক্তির পরিচয় দেয়। খননকারী মা বোলতারা তাদের প্রতিটা লার্ভার জন্য ছোটো গর্ত তৈরি করে সেখানে খাবার মজুত করে রাখে এবং কয়েকদিন পর আরও খাবার নিয়ে আসে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শত শত স্ত্রী বোলতাদের সাথে থাকলেও, মা বোলতারা নির্ভুলভাবে ৯টি বাসার অবস্থান মনে রাখতে সক্ষম।
মায়েরা তাদের সন্তানদের বয়স অনুযায়ী খাওয়ায়। এর মধ্যে যদি কোনো সন্তান মারা যায় তাহলে তারা খাদ্য সরবরাহের ক্রম পরিবর্তন করে। এমনকি প্রথমবার যাদের বেশি খাবার দেয় পরে তাদের খাবার দিতে একটু দেরি করে । তাদের এই পরিবর্তিত সময়সূচি সন্তানদের অনাহারে থাকার সম্ভাবনা কমায়।
গবেষকদের মতে এই ছোটো মস্তিষ্কের পতঙ্গটি যেরকম নির্ভুল নিপুণ অবিশ্বাস্যভাবে তার পরিকল্পনা ও স্মৃতিকে কাজে লাগায় যেটা মানুষের পক্ষেও সম্ভব নয়। বাস্তবে এরা এ ও মনে রাখতে পারে যে সন্তানদের কোথায়,কখন এবং কি খাইয়েছিল মানব মস্তিষ্ক ও এত নিখুঁত ভাবে মনে রাখতে পারে না। গবেষক অধ্যাপক ফিল্ড বলেছেন মানুষের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পালাভিত্তিক স্মৃতি দেখা যায় অর্থাৎ ইতিমধ্যে সে যা করে ফেলেছ পরে তা মনে করতে পারে। তাঁদের কাছে এখনও এটা বিস্ময়ের ব্যাপার যে কিভাবে বোলতারা এই অসাধারণ কৌশল অর্জন করলো।
এই বোলতারা ব্রিটেনের হিথল্যান্ডবাসী। এরা সেখানকার হিদার গাছের শুঁয়োপোকা শিকার করে। তাদের খাদ্য যোগানের পদ্ধতি অনেকটা এরকম – মা বোলতারা প্রথমে গর্ত খনন করে তারপর শুঁয়োপোকা ধরে তাদের ঘায়েল করে মেরে তার ওপরেই ডিম পাড়ে যাতে সদ্যজাত লার্ভারা শুঁয়োপোকাটাকে খেতে পারে। এরপর মা বোলতা ঐ গর্তের প্রবেশের পথ বন্ধ করে চলে যায় নতুন গর্ত খুঁড়ে অন্য সন্তানদের খাদ্যের যোগান দিতে।আবার ২-৭ দিন পর ফিরে এসে দেখে লার্ভা বেঁচে আছে কিনা,যদি থাকে তারা আরও খাবার(৮টি শুঁয়োপোকা) রেখে বাসা আটকে চলে যায় চিরতরে। আর যদি মৃত লার্ভা পায় তবে সেখানে ডিম পাড়ে এবং এই বাসাকে খাদ্য সরবরাহের শেষ সারিতে রাখে।
দেখা গেছে এরা এদের বাসা শনাক্ত করতে পাথরের মতো দৃশ্যমান কোনো চিহ্ন ব্যবহার করে।এরা সাধারণত এদের বাসা চিনতে ভুল করে না, তবুও দেখা গেছে ১২৯৩টি খাদ্য সরবরাহকারীর মধ্যে মাত্র ১.৫% অন্য স্ত্রী বোলতার বাসায় ঢুকে পড়েছিল। এই মা বোলতারা যদি কোনো কারণে বড়ো শুঁয়োপোকা ধরত তাহলে সন্তানদের খাবার দেওয়ার সময়সূচিতে পরিবর্তন আনত। যারা বড় শুঁয়োপোকা পেয়েছে তাদের ছেড়ে অন্যদের খাবার যোগান দিত ।এই পদ্ধতিতে কখনো কখনো ভুল হতো, বিশেষ করে যাদের অনেক সন্তান ।
এই গবেষণা প্রকৃতপক্ষে দেখিয়েছে যে বোলতারা কি করে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে , কেন এই দক্ষতা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন প্রাকৃতিক নির্বাচন এই বিশেষ ক্ষমতাকে বেছে নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 2 =