কম ঘুমোনো শরীরেরে পক্ষে ক্ষতিকর

কম ঘুমোনো শরীরেরে পক্ষে ক্ষতিকর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কম ঘুমোনো শরীরেরে পক্ষে ক্ষতিকর

কাজের চাপে বা অন্য কোনও কারণে এক রাত জেগে থাকলেই পরের দিন গা ম্যাজম্যাজ করে, ঘুম ঘুম পায়, সারা দিন হাই ওঠে, খুবই বিরক্তিকর লাগে। আমরা হয়তো ভাবতেই পারিনা দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে থাকার কথা। কিন্তু অবিশ্বাস্য মনে হলেও ১৯৮৬ সালে এমন নজির গড়েছিলেন রবার্ট ম্যাকডোনাল্ড। তাও আবার ৪৫৩ ঘণ্টা অর্থাৎ প্রায় ১৯ দিন না ঘুমিয়ে!
তার নাম উঠেছিল গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। ১৯৯৭ সালে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস নিরাপত্তার কারণে দীর্ঘতম সময়ের জন্য না ঘুমানোর রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করা বন্ধ করে দেয় কারণ দীর্ঘ সময়ের জন্য না ঘুমোনো অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিতভাবে প্রতি রাতে সাত ঘণ্টার বেশি ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে হতাশা, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের মতো একাধিক অবস্থার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘুম আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মস্তিষ্ক এবং শরীরের সব কলকব্জাকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করানোর জন্য ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমের সময় আমাদের শরীরের বিভিন্ন সিস্টেম বিশ্রাম নেয়, মেরামত হয়। সারা দিন কাজের পর শক্তি পুর্নসঞ্চয়, নতুন কোশ তৈরি, মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড ঠিক রাখা থেকে ক্ষত সারানো— সবের নেপথ্যেই রয়েছে ঘুম। ঘুমের প্রথম তিনটি পর্যায়ে, প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ হ্রাস করে। ঘুমের শেষ পর্যায় অর্থাৎ, র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM) পর্যায়, হার্টের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায় এবং চোখের মণি নড়াচড়া করে। এই পর্যায়টি বৌদ্ধিক ক্রিয়াকলাপ যেমন সৃজনশীলতা, শিখন এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘুমানোর আগে মদ বা ক্যাফেইন সেবন এই ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করতে পারে। ঘুমের অভাব তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ২৪ ঘন্টা ঘুমের অভাবও শরীরে কার্যক্ষমতা ব্যহত করতে পারে। তীব্র ঘুমের অভাবের বিভিন্ন লক্ষণ থাকতে পারে যেমন- ফোলা চোখ বা চোখের নীচে কালি, বিরক্তি, বৌদ্ধিক দক্ষতার হ্রাস, ব্রেন ফগ এবং খাবারের স্পৃহা। দুদিন ধরে না ঘুমোলে লক্ষণ বৃদ্ধি পায় এবং আচরণগত পরিবর্তন ঘটে, সেইসাথে বৌদ্ধিক ক্ষমতা আরও হ্রাস পায়। শরীরের ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হয়ে ওঠে যার ফলে এই নিদ্রাহীন ব্যক্তিদের প্রায় ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী “মাইক্রোস্লিপ” বা অনিচ্ছাকৃত ঘুম হয়। শরীরের খাবারের চাহিদা বেড়ে যায় সেই সঙ্গে শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া যেমন প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ব্যক্তি আরও বেশি রুগ্ন হয়ে পড়ে। টানা তিন দিন ব্যাপী ঘুম না হলে ব্যক্তি ঘুমের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, দীর্ঘক্ষণ ঘুমের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্নতা অনুভূত হয় এবং হ্যালুসিনেশন ঘটতে থাকে। চার নম্বর দিনে সমস্ত উপসর্গগুলো আরও খারাপ হয়ে যায়। স্লিপ ডেপ্রিভেশন সাইকোসিসে মানুষ আক্রান্ত হয় যেখানে সে বাস্তবের ব্যাখ্যা ভিন্নভাবে করে থাকে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অনেকের ক্ষেত্রে এক রাতের ঘুমই যথেষ্ট আবার কারোর ক্ষেত্রে কয়েক দিন বা সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। মানসিক চাপ সামাল দিতে গেলেও রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। শরীর ঠিক রাখতে তাই পর্যাপ্ত ঘুমের দিকে নজর দিন।