করোনার ওষুধ তৈরির চেষ্টা শুরু

করোনার ওষুধ তৈরির চেষ্টা শুরু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ আগষ্ট, ২০২১
করোনার ওষুধ তৈরির চেষ্টা শুরু

দেড় বছরের উপর করোনা মোকাবিলা করছে পৃথিবীর প্রতিটা দেশ। বিশ্বের সব বিজ্ঞানী নিজের বুদ্ধি-ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করছেন পৃথিবী থেকে করোনা বিদায়ের কাজ যাতে তাড়াতাড়ি করা যায় সেই কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে। এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানের সাফল্যের সব থেকে বড় প্রমাণ হচ্ছে ভ্যাকসিন তৈরি। বিভিন্ন পদ্ধতিতে তৈরি করা বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিনই এখন করোনা মোকাবিলায় অগ্নিবাণ হয়ে মানুষের হাতে পৌঁছেছে। আর আছে আত্মরক্ষার প্রতিষ্ঠিত অস্ত্র- মুখ ঢাকার মাস্ক। এত করেও করোনার সঙ্গে যুদ্ধে স্বস্তি মিলছে না এখনও। কারণ বেশ কিছু মানুষ প্রতিদিনই অসুস্থ হচ্ছেন। করোনার নানা রূপ পরিবর্তনের পথ বেয়েই মূলত তা ঘুরছে। তার সঙ্গে মাস্ক ব্যবহারে অনীহা, টিকার যোগানের অপ্রতুলতা তো আছেই। ভাল কোন ওষুধ নেই এখনও অ্যান্টিবায়োটিক গোছের- যা খেলেই নিশ্চিন্ত হয়ে বলা যাবে যে করোনার হাত থেকে অসুস্থরা মুক্তি পাবে। করোনায় অসুস্থ হয়ে গুরুতর অবস্থা যাঁদের হয় তাঁদের প্রাণ বাঁচানো এবং জটিলতা কমানোই এখন ওষুধ আবিষ্কারের লক্ষ্য। এখনও পর্যন্ত প্রয়োগিক গবেষণায় দেখা গেছে যে শুধুমাত্র ডেক্সামিথাসোন নামের স্টেরয়েড প্রয়োগেই অসুস্থদের অবস্থায় কিছুটা হেরফের হয়। অন্যান্য ওষুধের মধ্যে একমাত্র একটা খুব ছোট অংশের মানুষের লাভ হয় টোসিলুজুম্যাব বলে একটি ইন্টারলিউকিন রিসেপ্টর নিরোধক ওষুধের প্রয়োগের ফলে। যেটা মাথায় রাখা দরকার সেটা হচ্ছে যে করোনা সংক্রমণের কোপে যাঁরা জটিলতার মধ্যে পড়েন তাঁদের শরীরে খারাপ প্রভাবগুলো মূলত হয়, সোজাসুজি করোনা ভাইরাস দিয়ে নয়। করোনা ভাইরাস আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলার এবং প্রদাহ তৈরি করার ক্ষমতা আছে এরকম রাসায়নিক- যার নাম সাইটোকাইন- সেগুলোকে ক্ষেপিয়ে তোলে। অবিন্যস্ত সাইটোকাইন ঝড়ে শরীর বিপর্যস্ত হয়, কখনও বা আসে মৃত্যু।

এটা মাথায় রেখেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীর চল্লিশটা দেশে শুরু করছে নতুন ওষুধের সন্ধান। শুরু হচ্ছে বিশ্বজোড়া ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল- সলিডারিটি প্লাস। র‍্যানডমাইসড ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ধাঁচায় এই সুবিশাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন যাঁরা তাঁদের তিনটি ওষুধের মধ্যে কোন একটি দেওয়া হবে। তিনটির কোনটিই ‘অ্যান্টিভাইরাল’ নয়। ইমাটিনিব নামে একটি রক্তের ক্যানসারে ব্যবহার করা হয় এরকম একটি ওষুধ, ইনফ্লিক্সিম্যাব বলে একটি রিউমাটয়েড আরথাইটিসের ওষুধ এবং আরটিসুনেট বলে একটি ম্যালেরিয়ার ওষুধ। তিনটি ওষুধেরই ইমিউন সিস্টেমের উপর প্রভাব করার ক্ষমতার উপরই এইগুলো বিজ্ঞানীরা বেছে নিয়েছেন। এই পরীক্ষার মূল পরিচালক জন রটিংজেন। নরওয়ে ইন্সটিটিউট অফ্‌ পাবলিক হেলথ্‌ এর অধিকর্তা। ৬ই আগস্ট প্রথম রোগীর উপর তা প্রয়োগ করা হচ্ছে ফিনল্যান্ডে।

মনে রাখা দরকার ক্লিনিক্যালট্রায়াল শুরু মানেই ওষুধ আবিষ্কার নয়। অনেক নিয়মনীতি চড়ায়-উতরাই এর মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানীদের এগোতে হবে। ওষুধ আবিষ্কারের এটাই পরীক্ষিত পথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − two =