কাকলি

কাকলি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫

যোগাযোগের মাধ্যম শব্দ। মানুষের অভিধানে লক্ষাধিক শব্দ। তবে পাখিদের শব্দ ভাণ্ডারও কম নয়। যেমন, শিকারীকে দেখলে, ক্ষুদে ব্ল্যাক-ক্যাপড চিকাডি উচ্চ শব্দে ডাক ছাড়ে। অন্যদিকে ক্ষুধার্ত পিলেটেড কাঠঠোকরার ছানারা খাবারের অপেক্ষায় অদ্ভুত গুঞ্জন করে। অসংখ্য প্রজাতি, অসংখ্য শব্দ। কখনও সঙ্গী খুঁজে পেতে, কখনও এলাকা দখলে সহযোদ্ধা খুঁজতে…

পাখির শব্দ, কিসের দ্বারা প্রভাবিত হয় – উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে গবেষণা করেছেন। তারা প্রায় এক লাখের বেশি অডিও রেকর্ডিং ব্যবহার করেছেন গবেষণার জন্য। তাদের গবেষণার মধ্যে শুধুই পাখির শব্দ নেই। পাখিদের আবাসস্থল, ঠোঁটের আকার, শরীরের আকার এবং সাথে নির্দিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য পাখিদের শব্দকে কোন নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে প্রভাবিত করতে পারে কিনা, তা দেখার চেষ্টা করেছেন। শুধুই চেষ্টা নয় ফলও মিলেছে বেশ।

বিগত সময়ে এই ধরণের গবেষণা, মূলত স্থানীয় আকারে করা সম্ভব হতো। কিন্তু এই গবেষণাটি, বিশ্বব্যাপী ফলাফলগুলিকে একত্রিত করতে পেরেছে। বিশ্বের নানা অঞ্চলের পাখিবিশেষজ্ঞ, ‘বার্ড ওয়াচার’রা গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছেন। তারা অডিও রেকডিং গুলোকে, ‘জেনো-ক্যান্টো’ নামক একটি অনলাইন ক্লাউড এ জমা করতে থাকেন। লক্ষ্য করা যায়, রেকর্ডিংগুলির ৭৭ শতাংশই চেনা প্রজাতির পাখির।

কিছু অপ্রত্যাশিত উপায়ে, আবাসস্থল, পাখির শব্দের কম্পাঙ্ককে প্রভাবিত করে বলে গবেষকরা জানান। যেমন জলজ জায়গা, বিশেষ করে স্রোত বেশি আছে এমন জায়গায়, পাখির ডাকের কম্পাঙ্ক উচ্চতর। কারণ সারাক্ষণই এসমস্ত জায়গায় একনাগাড়ে জলের হালকা শব্দ চারপাশকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এরকম এলাকায়, পাখিদের উচ্চতর কম্পাঙ্কে তৈরি করা শব্দ, জলের শব্দে হারিয়ে যায় না। অন্যদিকে একই অক্ষাংশের, পাখির প্রজাতি একই রকম শব্দ করে।

ঠোঁটের আকার এবং শরীরের ভর উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ, পাখির শব্দ নির্মাণে। সাধারণভাবে, ছোট পাখি উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ এবং বড় পাখিরা কম কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করে। বিশ্বব্যাপী, ছোট পাখির প্রজাতির কম্পাঙ্কের পরিসর বিস্তৃত। ছোট পাখিদের ঝুঁকি বেশি। তারা এই শব্দগুলিকে, সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করে। এদের উচ্চতর কম্পাঙ্ক, বিপদে সহপাখিদের সাথে যোগাযোগে সাহায্য করে। অন্যদিকে, নীচের কম্পাঙ্কে তাদের ডাক কিছুটা ছদ্মবেশের মতো কাজ করে। শিকারীদেরকে তারা ভাবতে প্ররোচিত করে যে, আসলে তাদের চেহারা অনেক বড় এবং শক্তিশালী।

গবেষণার সহ-লেখক ও ডক্টরাল ছাত্র ইউ ডাবলু ম্যাডিসন এবং ড. এইচ.এস. সত্য চন্দ্র সাগর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “সারা বিশ্বে, মুলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বড় পাখিদের মাংস শিকারের প্রবণতা রয়েছে,” বড় পাখি কম কম্পাঙ্কে ডাকে। যদি আমরা নিম্ন কম্পাঙ্কে তেমন শব্দ না পাই, তাহলে আমরা বলতেই পারি যে এই ল্যান্ডস্কেপ আরও শিকার উপযোগী।”

সাগর আশা করেন যে, এই অধ্যয়নটি সাউন্ডস্কেপের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ করতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য এটি একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি ২৪ঘন্টা সাউন্ডস্কেপ রেকর্ডিং ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন। তাঁর মনে হয়েছে, কিছু পাখি কোলাহলপূর্ণ জায়গায় যোগাযোগ করতে, কম্পাঙ্ক এবং ডাকের সময়, তাদের সুবিধা মাফিক পরিবর্তন করতেও পারে।