কিছু মানুষ কখনই কোভিডে আক্রান্ত হননি- কেন?

কিছু মানুষ কখনই কোভিডে আক্রান্ত হননি- কেন?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ আগষ্ট, ২০২৪
কোভিড

বছর দুয়েক আগেও মাস্ক যেন মানুষের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। সঙ্গে নিতে হত স্যানিটাইজ়ার। কোভিড অতিমারি বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ নিয়েছে। কেবল শারীরিক ভাবে নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল এই ভাইরাস। তবে এখনও এমন অনেক মানুষ আছেন, যাদের এই রোগ বাগে আনতে পারেনি। এমন অনেকেই আছেন যারা বার বার কোভিড রোগীদের সংস্পর্শে আসার পরও সংক্রমিত হননি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে সম্ভবত একটি বিশেষ জিনের ক্রিয়াকলাপ আর তার সঙ্গে খুব দ্রুত অনুনাসিক ইমিউন প্রতিক্রিয়া এই রোগ এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
যারা চার বছরেরও বেশি সময় ধরে কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ এড়িয়ে গেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই নতুন আবিষ্কৃত ইমিউন প্রতিক্রিয়া কার্যকরী হতে পারে। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ইচ্ছাকৃতভাবে করোনভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত করা হয়েছিল। দেখা গেছে যে সব অংশগ্রহণকারীদের এইচএলএ-ডিকিউএ২ নামের ইমিউনিটি জিনটি উন্নত কার্যকলাপ প্রদর্শন করে, কোভিড ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পরেও তাদের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ঘটেনি। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে করোনভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং কীভাবে কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে আর অন্যরা সুস্থ থাকে সে বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেয় এই অধ্যয়ন। যে সমস্ত অংশগ্রহণকারীরা ট্রায়ালে অসুস্থ হয়ে পড়েনি তাদের মূলত দুটি দলে ভাগ করা হয়। কিছু ব্যক্তি কখনই ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামিত হননি, তাদের পরীক্ষা সবসময় নেগেটিভ রেজাল্ট দেখায়। আর কিছু ব্যক্তির নাকে ক্ষণস্থায়ী সংক্রমণ ঘটলেও তাদের শরীর দ্রুত তা প্রতিরোধ করে, তাই তারা কখনই অসুস্থ হয়নি। প্রথম দলের ক্ষেত্রে গবেষকরা একধরনের ইমিউন কোশ- মোনোসাইট ও টি-কোশে, বিস্তৃত অথচ সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন শনাক্ত করেন। ক্ষণস্থায়ীভাবে সংক্রামিত ব্যক্তিরা এক্সপোজারের একদিনের মধ্যে তাদের নাকের মধ্যে একটি শক্তিশালী ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার নাম ইন্টারফেরন প্রতিক্রিয়া যা কোশে ভাইরাস আক্রমণের সংকেত পাঠায় ও তাদের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আকর্ষণ করে। অন্যদিকে, যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাদের নাকে একই ইন্টারফেরন প্রতিক্রিয়া গড়ে উঠতে প্রায় পাঁচ দিন সময় লেগেছিল। এর ফলে ভাইরাস বৃদ্ধি পায় ও ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে শরীরে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে। তবে গবেষকরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন বয়সের আরও বড়ো দলকে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী এবং তাদের বিশ্বাস সেই অধ্যয়ন আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ ফলাফল দেখাতে পারে ।