কীভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন

কীভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আপনার উচ্চ কোলেস্টেরল আছে। দ্য কনসারভেশনে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হচ্ছেআপনার ডায়েটে এটার মাত্রা কমিয়ে আনবে কিনা তা আপনি ছ মাস দেখতে পারেন, তারপর আপনি আপনার বিকল্পগুলো ভাবতে পারেন। কিছু ভালো প্রমাণ আছে যে নির্দিষ্ট পরিপূরক গ্রহণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়ার সাথে সাথে, একটি পার্থক্য তৈরি করতে পারে।
দুটো প্রধান ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে, উভয়ের সাথে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের সম্পর্ক আছে। উভয় প্রকারই রক্তপ্রবাহে লাইপোপ্রোটিন নামক অণুর অভ্যন্তরে বাহিত হয়। কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল কোলেস্টেরল, যাকে “খারাপ” কোলেস্টেরল বলা হয় তা লিভার থেকে সারা শরীরের কোশে কোলেস্টেরল বহন করে। রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা ধমনীকে আটকাতে পারে, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল কোলেস্টেরলকে প্রায়ই “ভালো” কোলেস্টেরল বলা হয়। এই লাইপোপ্রোটিন রক্ত প্রবাহ থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং প্রক্রিয়াকরণ এবং নির্গমনের জন্য এটি লিভারে ফেরত পাঠায়। এইচডিএল কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা আবার হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে যুক্ত।
রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা, বিশেষ করে এলডিএল বা “খারাপ” কোলেস্টেরল কমাতে ডায়েট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মধ্যে রয়েছে বেশি অসম্পৃক্ত তৈলাক্ত খাবার যেমন অলিভ অয়েল বা অ্যাভোকাডো, তেমন খাদ্য তালিকায় কম থাকা প্রয়োজন সম্পৃক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্য যেমন পশুর চর্বি এবং ট্রান্স ফ্যাট পাওয়া যায় এমন খাবার যেমন দোকানে কেনা বিস্কুট, পাই এবং পিজা।
খাদ্যের মাধ্যমে আপনার মোট কোলেস্টেরল এবং এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর আর একটা উপায় হল দ্রবণীয় ফাইবার খাওয়া। এটি এক ধরনের ফাইবার যা জলে দ্রবীভূত হয়ে অন্ত্রে জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে। জেলটি কোলেস্টেরল অণুর সাথে আবদ্ধ হয়ে অণুগুলোকে রক্ত প্রবাহে শোষিত হতে বাধা দেয় এবং তা মলত্যাগের মাধ্যমে তা শরীর থেকে নির্মূল হয়। ফল, সবজি, ওটস, বার্লি, মটরশুটি এবং মসুর ডালের মতো সম্পূর্ণ খাবারে দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায়। বাজারে অনেক ফাইবার পরিপূরক এবং খাদ্য-ভিত্তিক পণ্য রয়েছে যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে যেমন ইসবগুলের ভুষি। এই ফাইবারের সম্পূরক কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নতি করে তার প্রমাণ অন্তত ২৪ টা উচ্চ-মানের নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায় দেখা গেছে। অন্যান্য কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী সম্পূরক, যেমন প্রোবায়োটিক, অনেকগুলি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কোশে কোলেস্টেরল একত্রিত করতে সাহায্য করা এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের সামঞ্জস্য রক্ষা করা যাতে মলের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নির্মূল করা যায়। রেড ইস্ট চাল হল আরেকটি নন-ফাইবার সম্পূরক যা কোলেস্টেরল কমানোর জন্য ভালো। এটা এশিয়া এবং কিছু ইউরোপীয় দেশে একটি পরিপূরক থেরাপি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি ক্যাপসুল আকারে আসে এবং স্ট্যাটিন নামে পরিচিত কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী ওষুধের ভূমিকা অনুকরণ করে বলে মনে করা হয়।
কিন্তু মনে রাখবেন, শুধুমাত্র খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন, পরিপূরক খাদ্যাভ্যাস আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে, চাপ কমাতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমোতে হবে। জেনেটিক্সও এক্ষেত্রে একটা ভূমিকা পালন করে। আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং অন্যান্য ঝুঁকির ওপর নির্ভর করে, আপনাকে কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী ওষুধের ডাক্তারের পরামর্শ অনু্যায়ী খেতে হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five + 15 =