কুঁজোতিমির খাদ্যঘাটতি ও জীববৈচিত্র্য

কুঁজোতিমির খাদ্যঘাটতি ও জীববৈচিত্র্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ আগষ্ট, ২০২৫

কুঁজওয়ালা তিমিরা প্রতিবছর হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে পরিযান করে থাকে, মূলত অ্যান্টার্কটিক (দক্ষিণ মেরু) অঞ্চলের খাদ্যভূমি থেকে উষ্ণ অঞ্চলের প্রজননভূমির দিকে। এই দীর্ঘ যাত্রা সফল করতে প্রয়োজন সময়জ্ঞান, শক্তি ও উপযুক্ত পরিবেশগত অবস্থা। তবে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই তিমিরা এখন প্রায় তিন সপ্তাহ আগেই দক্ষিণমুখী যাত্রা শুরু করছে। আগে ২০০৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তিমিদের দক্ষিণমুখী পরিযানের শীর্ষ সময় অক্টোবরের শুরুর দিকে ছিল। কিন্তু এখন পিছিয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি চলে এসেছে। শব্দ ও চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণে প্রমাণ মিলেছে যে, শুধু একটি নির্দিষ্ট তিমি দল নয়, সব বয়স ও শ্রেণির তিমিদের মধ্যেই এই সময় পরিবর্তনের ধারা দেখা গেছে।
এর অন্যতম সম্ভাব্য কারণ, অ্যান্টার্কটিক সাগরে বরফ ও ক্রিলের ঘাটতি। ক্রিল হলো কুচো চিঙড়ি জাতীয় প্রাণী যা তিমিদের প্রধান খাদ্য। এদের টিকে থাকতে হলে সামুদ্রিক বরফ প্রয়োজন। ২০১৬ সালের পর থেকে রস সাগরসহ অন্যান্য অঞ্চলের সামুদ্রিক বরফ ব্যাপক হারে কমে গেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে বরফের পরিমাণ ছয় মিলিয়ন বর্গকিলোমিটারেরও বেশি কমে গেছে। ফলে তিমিরা যথাযথ পরিমাণ খাদ্য সংগ্রহ করতে না পেরে আগেই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে এই ধরণের তিমির সংখ্যা ১৯৬০-এর দশকে মাত্র ৩০০ থেকে বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৪০,০০০ হয়েছে। যদিও এটি একটি সাফল্য, কিন্তু এর ফলে ক্রিল নিয়ে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। একইসঙ্গে, ক্রিল মাছ ধরার চাপও বেড়েছে, যা খাদ্যের ঘাটতি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই পরিবর্তন শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই নয়, বরং ক্যালিফোর্নিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলেও দেখা যাচ্ছে। অনেক তিমি আগেভাগে প্রজননভূমিতে পৌঁছাচ্ছে কিংবা খাওয়ার জায়গা তাড়াতাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে।

গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে প্রজনন হার কমে যেতে পারে। মা তিমিরা হয়তো যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে না সন্তানের জন্মদান ও দীর্ঘ যাত্রার জন্য।
তিমির পরিযানের সময় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সমুদ্রের তাপমাত্রা, খাদ্যচক্র ও জীববৈচিত্র্যে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাই তিমিদের এই আচরণকে পরিবেশগত পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক ধরে নিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতির উপর বিশেষ নজর দিতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ Scientific Reports, 21.7.2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − seven =