কুমিরের রক্তে রহস্যময় হিমোগ্লোবিন

কুমিরের রক্তে রহস্যময় হিমোগ্লোবিন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ জানুয়ারী, ২০২৩

সাহারার দক্ষিণে, নদীর তীরে এক প্ল্যাটিনাম মেডেল জয়ী খেলোয়াড় দেখতে পাওয়া যায়। আর সেটা হল নীল নদের কুমীর। এরা প্রতি ঘন্টায় ৫০-এরও বেশি মাইল বেগে লাফাতে পারে এমনকি একবারে ৩০ ফুটের বেশি লাফায়। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় যেখানে জীবন মৃত্যুর প্রধান উপাদান হল জল, সেই জল পানের জন্য সদা অস্থির এই কুমীর নিজেকে শান্ত করে রাখে।
দেখা গেছে শিকার ধরার সময় নীল নদের কুমির তার শিকারের অপেক্ষায় প্রায় এক ঘন্টা ধরে একই কর্দমাক্ত নদীতে নীরবে নিজেকে নিমজ্জিত করে রাখে। তারপর অকস্মাৎ অদেখা শিকারীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হরিণ প্রজাতির ‘ইমপালা’-র উপর। শিকারটিকে আক্রমণ করে, কুমির তার দাঁত দিয়ে ৫০০০ পাউণ্ডের শক্তি নিয়ে কামড় বসায় ইমপালার পিছনের অংশে। কিন্তু তবুও ইমপালার মৃত্যুর প্রধান কারণ হল জলে ডুবিয়ে তাকে মেরে ফেলা। কুমিরের গভীর শ্বাস নেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে তাই সে তার শিকারকে টেনে নিয়ে যায় গভীর জলে ডুবিয়ে মারার জন্য। এই কুমিরদের শরীরের রক্তপ্রবাহে মিশে থাকা হিমোগ্লোবিনের সাহায্যে খুব ধীর গতিতে ফুসফুস থেকে কোশীয় কলাতে অক্সিজেন নির্গত হয়। এর ফলে কুমিরগুলো ঘন্টার পর ঘণ্টা বাতাস ছাড়া থাকতে পারে। জীববিজ্ঞানীরা তাই ভাবতে বাধ্য হয়েছে যে কীভাবে ও কেন সারা বিশ্বের সমস্ত চোয়ালযুক্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে, কুমিররাই একমাত্র গোষ্ঠী যারা বহুক্ষণ শ্বাস না নিয়ে থাকতে পারে। তারা দেখেছেন কুমিরদের শরীরের বিশেষ রকমের হিমোগ্লোবিন এর জন্য দায়ী।
নেব্রাস্কা ইউনিভার্সিটি-লিংকনের জে স্টর্জ এবং তার সহকর্মীরা কুমির এবং পাখির ২৪০ মিলিয়ন-বছরের এই পূর্বপুরুষ, আর্কোসরের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে দেখেছেন যে শুধুমাত্র কয়েকটা মূল পরিব্যক্তির (মিউটেশন) জন্য নয় কুমিরের হিমোগ্লোবিনের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ২১ টা আন্তঃসংযুক্ত পরিব্যক্তি থেকে উদ্ভূত হয়েছে । এর ফলে তার লাল রক্তকণিকার জটিল উপাদানগুলোর মধ্যে পরিবর্তন ঘটে আর এই পরিবর্তনের ফলে নীল নদের কুমির বাতাস ছাড়াও ঘন্টার পর ঘণ্টা থাকতে পারে।