কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে কণ্ঠস্বর জালিয়াতি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে কণ্ঠস্বর জালিয়াতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দ্রুত বিকাশ নানা প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়েছে। আবার এক শ্রেণির মানুষ এর সুযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে ঠকাচ্ছে। অপরাধীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ছবি, লেখা, কণ্ঠস্বর নকল করে মানুষকে আর্থিক প্রতারণা করে থাকে। এর একটা খুব চালু উদাহরণ হল ভয়েস ক্লোনিংয়ের অপব্যবহার। ডিপফেক প্রযুক্তির সাহায্যে যে কোনো ব্যক্তির কথা বলার ভঙ্গি, কণ্ঠস্বরের ওঠানামা, নিঃশ্বাস নেওয়া এগুলোর নমুনা থেকে কণ্ঠস্বরের ডিজিট্যাল প্রতিলিপি তৈরি করা হয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, স্ক্যামাররা এই ভয়েস ক্লোন করে মানুষকে এমন ভাবতে প্রতারণা করতে পারে যে সে আর্থিক বড়ো ক্ষতির মুখোমুখি হয়। উন্নত প্রযুক্তিতে, ভয়েস ক্লোনিং মাত্র তিন সেকেন্ডের অডিও নমুনা থেকেও করা যেতে পারে। ছোটো বাক্যাংশ যেমন ‘হ্যালো, কে বলছেন?’ এর থেকেও ভয়েস ক্লোনিং স্ক্যাম হতে পারে। আর দীর্ঘ কথোপকথন স্ক্যামারদের বিশদে কণ্ঠস্বর ধরতে সহায়তা করে। তাই কে ফোন করছে তার পরিচয় না জেনে বেশি কথা না বলাই শ্রেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা বা বিখ্যাত মানুষের কণ্ঠস্বর ক্লোন করে, তাদের মুখ দিয়ে এমন কথা বলানো হয়, যা তাদের বিড়ম্বনায় ফেলে।
অনেক ভয়েস ক্লোনিং কেলেঙ্কারির ঘটনা খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে এক কোম্পানির ডিরেক্টরের কণ্ঠস্বর নকল করে ৫১ মিলিয়ন ডলার লুট করা হয়েছে। মুম্বাইয়ের একজন ব্যবসায়ী দুবাইয়ের ভারতীয় দূতাবাস থেকে পাওয়া জাল কলের শিকার হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় স্ক্যামাররা কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার স্টিভেন মাইলসের ভয়েস ক্লোন করে লোকেদের বিটকয়েনে বিনিয়োগ করার জন্য প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে। কিশোর-কিশোরী ও শিশুরাও এর শিকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক কিশোরীর কণ্ঠস্বর ক্লোন করে তাকে অপহরণ করা হয়েছে, এই মর্মে তার বাবা-মাকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল।
এই জালিয়াতির আওতা থেকে বাঁচতে, ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যক্তি এবং সংস্থাদের সতর্কতা জরুরি। প্রথমেই জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান এবং শিক্ষা এই ধরনের জালিয়াতি প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে। কারণ বহু মানুষ এখনও এ বিষয়ে বিশদে কিছু জানেন না। বর্তমানে নতুন প্রযুক্তিতে আসল স্বর শনাক্তকরণের জন্য বায়োমেট্রিক সুরক্ষা ব্যবহার করা শুরু হয়েছে যা নকল ও আসল কণ্ঠস্বর চিনতে ও যাচাই করতে সু্যোগ দেয়। যে সংস্থায় কণ্ঠস্বর যাচাই করা হয় সেখানে নানা সূত্রে তার প্রামাণ্য গ্রহণের কথা বিবেচনা করা উচিত। ভয়েস ক্লোনিংয়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী ক্ষমতা বাড়ানো জন্য আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা হওয়া দরকার।
তবে ভয়েস ক্লোনিং-এর বিনোদন, স্বাস্থ্য পরিচর্যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ রয়েছে। দূরবর্তী অঞ্চল থেকে শিল্পীরা ভয়েস দিতে পারেন, এমনকি মরণোত্তর ক্ষেত্রেও এটা প্রয়োগ করা যায়। আর বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের, ভয়েস ক্লোনিং-এর মাধ্যমে সহায়তা করা যায়। তবুও এর গোপনীয়তা আর নিরাপত্তা বিশেষ প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + fifteen =