
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার প্রোবা-৩ মিশন সফলভাবে মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ সৃষ্টি করে সূর্যের বাইরের আবরণ, অর্থাৎ করোনা, পর্যবেক্ষণ করেছে। এই মিশনের দুটি উপগ্রহ – করোনাগ্রাফ ও অকাল্টার – ১৫০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে নিখুঁত সমন্বয়ে একসাথে চলতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনাটি মহাকাশে ফরমেশন ফ্লাইং প্রযুক্তির এক যুগান্তকারী সাফল্য।
প্রোবা-৩ মিশনটি ৫ ডিসেম্বর ২০২৪-এ ভারতের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে PSLV-XL রকেটে উৎক্ষেপণ করা হয়। এতে ইউরোপের ১৪ দেশের ২৯টিরও বেশি সংস্থার সহযোগিতা রয়েছে।
প্রযুক্তির সাহায্যে অকাল্টার উপগ্রহটি সূর্যের উজ্জ্বল অংশ ঢেকে একটি ছোট ছায়া ফেলে, যা করোনাগ্রাফ উপগ্রহের একটি যন্ত্রে ধরা পড়ে। এই ছায়া সূর্যকে আড়াল করে, ফলে সূর্যের বাইরের অংশ থেকে নির্গত হালকা আলো ধরা সম্ভব হয়। করোনা পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকেই সৌর ঝড় ও সৌর বিস্ফোরণ নির্গত হয়, যা পৃথিবীর প্রযুক্তি ব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
এই প্রথম পর্যবেক্ষণগুলো সৌর করোনার অভূতপূর্ব চিত্র তুলে ধরেছে। প্রোবা-৩ প্রকল্পে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো ইউরোপিয় মহাকাশ এজেনসির জেনারেল সাপোর্ট টেকনোলজি প্রোগ্রামের মাধ্যমে উন্নীত হয়েছে। এই যন্ত্রটি সূর্যের পৃষ্ঠের খুব কাছ থেকে ক্ষীণ আলো শনাক্ত করতে সক্ষম, যা থেকে অন্যান্য প্রচলিত করোনাগ্রাফের চেয়ে বেশি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়।
DARA (Digital Absolute Radiometer) যন্ত্রটি সূর্যের নির্গত মোট শক্তি পরিমাপ করে, আর 3DEES (3D Energetic Electron Spectrometer) যন্ত্রটি পৃথিবীর বিকিরণ বলয়ে ইলেকট্রনের শক্তি ও দিক নির্ধারণ করে।
এই কৃত্রিম সূর্যগ্রহণ প্রতি ১৯.৬ ঘণ্টা পরপর পুনরায় তৈরি করা যায় এবং একটানা ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, যেখানে প্রাকৃতিক সূর্যগ্রহণ বছরে মাত্র এক-দুবার ঘটে এবং কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না।
এই মিশনের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য সৌর আবহাওয়া ও সূর্যের প্রতিরূপ তৈরিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। কেইউ লিউভেনের-এর “কোকোনাট” সফটওয়্যার প্রভৃতি সিমুলেশনগুলোকে এখন প্রোবা-৩ -এর প্রকৃত পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মেলানো যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আরও নিখুঁত ডিজিটাল সূর্যগ্রহণ সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে।