কৃবুও অযৌক্তিকতায় আক্রান্ত?

কৃবুও অযৌক্তিকতায় আক্রান্ত?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ আগষ্ট, ২০২৫

মনে হচ্ছে, অযৌক্তিকতার ব্যাপারে কৃ বু (এ আই) মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী। মনস্তত্ত্ববিদ মাঝারিন বানাজির নেতৃত্বে একদল মনস্তত্ত্ববিদ ওপেন-এ আই-৪০-কে নিয়ে বোধবুদ্ধির অসমাঞ্জস্য সংক্রান্ত একটি পরীক্ষা চালান। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রবন্ধ সৃষ্টি করে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো যায় কিনা, এটাই দেখতে চাইছিলেন তাঁরা। পরস্পর-বিরুদ্ধ বিশ্বাসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে বাধ্য হলে মানুষের মধ্যে যে-ধরাবাঁধা কতকগুলো আচরণের ছাঁদ লক্ষ্য করা যায়, এল এল এম কি তাকেই নকল করবে?

পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে প্রোসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এ। তা থেকে দেখা গেছে, সিস্টেমটি নিজের সৃষ্ট রচনার সুরে সুর মিলিয়ে মত বদলে ফেলে। মানুষও সব সময় এতটা করে না। বানাজি জানিয়েছেন, জিপিটিকে পুতিন-পম্থী কিংবা পুতিন-বিরোধী রচনা লিখতে বলা হয়েছিল। শর্ত একটি কিংবা দুটি। একটি শর্তে তাকে বেছে নেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। সে বাধ্য হবে হয় ইতিবাচক নাহয় নেতিবাচক রচনা লিখতে। অন্য শর্তে তার বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকবে। সে নিজের পছন্দমতো যেকোনো ধরণের রচনা লিখতে পারবে। তবে সে জানবে, কোন রচনাটি গবেষকদের বেশি কাজে লাগবে। ফলাফল থেকে দুটো জিনিস আবিষ্কার করা গেল। এক, মানুষেরই মতো, জিপিটি-ও পুতিনের প্রতি তার মনোভাব তার নিজের ফরমায়েসি রচনার ভালো-লাগা বা মন্দ-লাগার গতিক বুঝে বদলায়। কিন্তু স্বেচ্ছায় লিখেছে মনে করলে এই মত-বদলের মাত্রা অনেক বেশি হয়।

এ থেকে একটা সম্ভাবনার কথা মনে জাগে – এইসব মডেলগুলির আচরণ আগে যা ভাবা গিয়েছিল তার থেকে অনেক সূক্ষ্ম আর মানবোচিত। প্রশ্নের উত্তরে ওরা মোটেই তোতাপখির মতো কতকগুলো উত্তর আওড়ায় না। ওরা প্রশ্নকর্তার মনের অপেক্ষাকৃত অযৌক্তিক দিকগুলোর কথা মাথায় রাখে। জিপিটিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “জিপিটি, তোমার মনের সুপ্ত পক্ষপাতগুলো কী-কী?” উত্তর এল, “আমি শ্বেতাঙ্গ পুরুষ”। সে কী কথা! মডেলের লিঙ্গপরিচয় বা জাতিপরিচয়! তবে তার চেয়েও বড়ো কথা হল, ওর এই ঘুরিয়ে কথাবার্তা বলার পরিশীলিত ধরণ। ব্যাপারটা কি তাহলে এরকম যে ওই জিপিটি ভাবছে সে একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ কিন্তু কথাটা প্রকাশ্যে বলা উচিত না?

যন্ত্রের মনস্তত্ত্ব নিয়ে আরও গবেষণা চলছে। চলতি গবেষণার একটা ধারা হল, মানুষের মুখের বৈশিষ্ট্য, যেমন দু চোখের মধ্যকার দূরত্ব, কৃ বু-র সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে কতটা প্রভাবিত করে। প্রাথমিক ফলাফল থেকে মনে হচ্ছে, কোনো কোনো সিস্টেমে “আস্থা” কিংবা “পটুতা”র চেয়ে এই ধরণের বৈশিষ্ট্যগুলিই অনেক বেশি করে বিচারকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, এবং তার মাত্রাটা মানুষের চেয়ে বেশি। এ গবেষণার মূল কথা হল গবেষণার পাত্রকে এমন একটা অবস্থানের দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যেটা তার নিজস্ব ধ্যানধারণার বিপরীত। দেখা গেছে, নম্রভাবে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক রচনা লিখতে বললে জিপিটি পরীক্ষকদের তথ্য সংগ্রহের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে নিজের মনোভাব বেশ খানিকটা বদলায়। ইতিবাচক রচনা বেছে নেওয়ার পর জিপিটি পুতিনের নেতৃত্বদানের ক্ষমতার মাত্রা ১.২৫ নম্বর বাড়িয়ে দেয়। আবার স্বাধীনভাবে ইতি বা নেতিবাচক রচনা বেছে নেওয়ার পর সে আরও দু নম্বর বেশি দেয়।

মনে হয় যন্ত্রটার মধ্যেই অন্তর্লীন হয়ে আছে এক ধরণের অযৌক্তিকতা। এমনটা হওয়ার কথা নয়, তবু হচ্ছে। তাহলে কি যন্ত্রকে তালিম দেওয়ার সময়েই মানুষের মনস্তত্ত্বের গভীরতর কোনো দিক ওর মধ্যে ঢুকে গেছে, যেটা আগে বোঝা যায়নি?

সূত্র : https://news.harvard.edu/gazette/story/2025/07/can-ai-be-as-irrational-as-we-are-or-even-more-so/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − three =