কোন মহাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণী দেখা যায়?

কোন মহাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণী দেখা যায়?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ জুলাই, ২০২৪

শত শত বছর ধরে, বিজ্ঞানীরা সারা বিশ্ব জুড়ে প্রাণীপ্রজাতি তালিকাভুক্ত করছেন, তাদের ভূ-অবস্থান নির্ণয় করছেন। ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ মাতো গ্রোসোর পক্ষীবিদ ভিটার পিয়াসেন্টিনি বলেছেন, ডিজিটাল যুগের আগে, প্রাণী প্রজাতির বন্টন সম্পর্কে জানতে যাদুঘর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হত। আজকাল, জনসাধারণও এই প্রচেষ্টার ভাগীদার। বিগত ২০ বছরে, নাগরিক বিজ্ঞানে একটা বিপ্লব ঘটেছে, বিজ্ঞানীরা নাগরিকদের দেওয়া তথ্য ব্যবহার করে নানা ফাঁক পূরণ করেছেন। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে, বিজ্ঞানী নর্মান মায়ার্স “বায়োডাইভারসিটি হটস্পট” শব্দ ব্যবহার করে কোনো স্থানে ব্যতিক্রমীভাবে উচ্চ সংখ্যক প্রজাতির অবস্থান বুঝিয়েছিলেন। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৩৬ টা হটস্পট বেশিরভাগই এমন মহাদেশে পড়েছে যেখান দিয়ে নিরক্ষরেখা অতিক্রম করেছে, সেখানকার জলবায়ু উষ্ণ এবং স্যাঁতস্যাঁতে। প্রাণী প্রজাতির বেশি ব্যাপ্তির পেছনে উদ্ভিদরাও জড়িত, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একজন ফলিত পরিবেশবিদ বার্নাবাস দারু বলেছেন “উদ্ভিদ জীব প্রজাতির ভিত্তি”। যদি একটা জায়গায় গাছপালার উচ্চতর বৈচিত্র্য থাকে, তবে এটি সেইসমস্ত উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। উদ্ভিদ সমস্ত পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারলেও উষ্ণ, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা তাদের বিস্তারের জন্য আদর্শ। উষ্ণ পরিবেশে যেমন প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা পাওয়া যায়, তেমন অণুজীব, বিশেষত পচনকারী ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু যারা মৃত পদার্থ ভেঙে গাছকে পুষ্টি জোগায় তাদের বৃদ্ধির জন্যও ভালো।
পোকামাকড়, যা ফুল গাছের পরাগায়ন করে, উষ্ণ জলবায়ু তাদের জন্যও উপযুক্ত কারণ পোকামাকড় নিজের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে পোকামাকড় বেশি থাকলে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পরাগায়ন বেশি হবে আর ক্ষুধার্ত শিকারীরা বেশি খাবার পাবে। অনেক প্রজাতির জন্য, মহাদেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অবস্থার সাথে, বিভিন্ন ধরনের আবাসস্থলও জরুরি। উচ্চ জীববৈচিত্র্যের স্থানে প্রাণীদের থাকার জন্য নানা সম্ভাব্য কুলুঙ্গি থাকে। যেমন লম্বা গাছ বা উঁচু পর্বত তাপমাত্রা, সূর্যের আলো, ভূখণ্ডে উল্লম্বদিকে পরিবর্তন সৃষ্টি করে যাতে একই সম্পদ বা বাসস্থানের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে আরও বেশি প্রাণী সহাবস্থান করতে পারে। এই সমস্ত নানা নিয়ন্ত্রকের ভিত্তিতে দেখা গেছে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন রেন ফরেস্টে প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এই জীব বৈচিত্র্যও বিপন্ন হওয়ার পথে, জঙ্গল কাটা, অভ্রের খনির খনন ও জলবায়ু পরিবর্তন এর জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমাদের এখনও সময় আছে যাতে আমরা এই ক্ষতি মেরামত করে প্রকৃতিকে তার নিজের মতো বাঁচতে দিই।