টেলিপোর্টেশন মানে হল বিনা ঠেলায় কোনো কিছুকে এক জায়গা থেকে দূরে কোথাও পাঠানো। ভালো বাংলায় দূর-সঞ্চালন বলতে পারি। এতদিনে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা কার্যক্ষেত্রে এই দূরসঞ্চালন সম্ভব করতে পেরেছেন। আমেরিকার নর্থ-ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমারের নেতৃত্বে গবেষক-দল ইন্টারনেটে ফাইবার অপটিক কেব্ল মারফত তিরিশ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে একটি ফোটন কোয়ান্টাম পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। ফোটন হল আলো-কণা। কাজটা এতদিন প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ত। কারণ ইন্টারনেটে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি আলো-কণা চলাচল করে। তাদের ভিড়ে কোনো একটি বিশেষ আলো-কণাকে সুবিধে মতো জায়গায় বসিয়ে দেওয়া যে কত দুরূহ সে আমরা কল্পনাও করতে পারি না। প্রেম কুমার বলছেন, এর ফলে ফাইবার অপটিক অবকাঠামোর মধ্য দিয়েই বর্তমানে প্রচলিত নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে পরবর্তী যুগের কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কের সহাবস্থান ঘটানো সম্ভব হবে। কাজেই কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে পরবর্তী ধাপে উন্নীত করার পথ প্রশস্ত হল। এর জন্য কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট বলে একটা প্রক্রিয়াকে কাজে লাগানো হয়েছে। কোয়ান্টাম এণ্ট্যাঙ্গলমেন্ট-কে বাংলায় কোয়ান্টাম জড়াজড়ি দশা বলতে পারি। এ দশায় দূরে অবস্থিত কিংবা সময়ের দিক থেকে আগে বা পরের ঘটনায় জড়িত দুটি ইলেকট্রন বা প্রোটন কণা অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে। সুতরাং একটি কণার মধ্যে যে-তথ্য রয়েছে সেটি অন্য কণার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়, যদিও তাদের মধ্যে ভৌগোলিক বা কালিক দূরত্ব রয়েছে। কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী এক জায়গায় একটি বস্তুর অবস্থানের একাধিক সম্ভাবনা থাকে। তাদের মধ্যে একটি সম্ভাবনাকে বেছে নিয়ে তাকে সযত্নে বিনাশ করে, অন্য কোনো এক জায়গায় অনুরূপ একটি বস্তুর অবস্থানের সম্ভাবনাগুলির মধ্যে একটা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে দূর-সঞ্চালন। এবং এই পুরো ঘটনাটা ঘটে নিমেষের মধ্যে। এর জন্য দুটি অবস্থান-বিন্দুর মধ্যে একটিমাত্র ফোটন কণার তথ্য-তরঙ্গ পাঠাতে হয়। সমস্যাটা হচ্ছে, ইন্টারনেটে প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ গিগাবিট প্রবাহ চলে। তার মধ্যে ওই একটিমাত্র আলো-কণার স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে কীভাবে? এই নিয়েই গবেষক-দল দিনের পর দিন হরেকরকম কৌশল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। এতদিনে তাঁদের সাফল্য এসেছে। এর আগে ক্রিয়া অনুকরণ প্রক্রিয়া (সিমুলেশন) মারফত কম্পিউটারের মধ্যে কোয়ান্টাম তথ্য সঞ্চালন সম্ভব হলেও কার্যক্ষেত্রে সত্যিকারের ইন্টারনেটে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় দূর-সঞ্চালন সম্ভব হয়নি। সেটাই এবার সম্ভব হল। এর ফলে অদূর ভাবিষ্যতে ভৌগোলিক দিক থেকে বহুদূরে অবস্থিত গ্রাহীকেন্দ্রগুলির মধ্যে নিশ্চিন্তে কোয়ান্টাম সংযোগ স্থাপন করা যাবে। এতদিন ধারণা ছিল এর জন্য নতুন ধরনের অবকাঠামো বানানো দরকার হবে। কিন্তু এখন প্রমাণিত হল, বর্তমানে প্রচলিত অবকাঠামোর সাহায্যেই একাজ সম্ভব।
https://www.sciencealert.com/quantum-teleportation-achieved-over-internet-for-first-time
27 December 2024